17.4 C
London
May 14, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন পরিকল্পনা ঘিরে চ্যালেঞ্জের পাহাড়

যুক্তরাজ্যে অভিবাসন হ্রাসের অঙ্গীকার নতুন কিছু নয়। গত ১৫ বছর ধরে একের পর এক সরকার অভিবাসন কমাতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, তবে বাস্তবতা হচ্ছে—সংখ্যাগুলো এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এখন ঘোষণা দিচ্ছেন, “আমরা আমাদের সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনব”, এবং অভিবাসন সংখ্যা “উল্লেখযোগ্যভাবে” কমানোর জন্য কঠোর নীতি গ্রহণ করছেন।

জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (ONS)-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নিট অভিবাসন ছিল ৯০৬,০০০। ২০২৪ সালের জুনে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭২৮,০০০। যদিও এই সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে তা এখনও লক্ষ্যমাত্রার অনেক উপরে।
২০১০ সালে কনজারভেটিভ পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অভিবাসন “দশ হাজারের ঘরে” নামিয়ে আনবে, যা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

OBR-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, পার্লামেন্ট মেয়াদ শেষে নিট অভিবাসন কমে ৩১৫,০০০-এ পৌঁছাতে পারে। তবে এটিও গত দশকের বেশিরভাগ বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

যুক্তরাজ্যে আসা বেশিরভাগ অভিবাসী আসেন কাজ বা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা খাতে শ্রমিকদের উচ্চ চাহিদার কারণে এ খাতে প্রচুর ভিসা ইস্যু হয়েছে। তবে সম্প্রতি নিয়ম কঠোর হওয়ায় স্বাস্থ্য খাতে অভিবাসন হ্রাস পেয়েছে, যা আগামী দিনে নিট অভিবাসনের হারে প্রভাব ফেলবে।

সরকার বলছে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে “সস্তা বিদেশি শ্রম” নির্ভরতা থেকে বের হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জানান, “অভিবাসন মানেই উন্নয়ন”—এই তত্ত্ব সবসময় প্রযোজ্য নয়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন মানুষ এলে মোট অর্থনৈতিক কার্যকলাপ (GDP) বাড়ে, কিন্তু প্রতি ব্যক্তির উন্নয়ন (GDP per capita) সবসময় বাড়ে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ও অন্যান্য পরিষেবার উপর চাপ সৃষ্টি হয়। ইংল্যান্ডে শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই সমাজসেবাখাতে ছিল ১,৩১,০০০ শূন্যপদ।

কেয়ার হোম ব্যবসায়ী অ্যামি ক্লার্ক বলেন, “স্থানীয় লোকদের দিয়ে এসব পদ পূরণ করা খুবই কঠিন।”
সরকার যদি বিদেশ থেকে নিয়োগ বন্ধ করে, তাহলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
তবে বেতন বাড়ালে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব, যদিও তাতে স্থানীয় সরকারকে বাড়তি ভর্তুকি ও কর বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়।

বছরের পর বছর ধরে বিদেশি শিক্ষার্থী নিট অভিবাসনে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
তবে এই শিক্ষার্থীরাই যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় আয়ের উৎস।

সরকার এখন চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে বিদেশি শিক্ষার্থী গ্রহণ করে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে। একই সঙ্গে, স্নাতকের পরে তাদের যুক্তরাজ্যে থাকার সময়সীমাও কমিয়ে ১৮ মাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

Universities UK এ প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ এর ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় সংকটে পড়বে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় বিদেশি কর্মীর ভিসা ছিল ৩,৪২৭টি, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,৪৯৫।
অন্যদিকে, একই সময়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নতুন অ্যাপ্রেন্টিসশিপ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮,৫২০-তে।
এতে বোঝা যায়, দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। আর এই ঘাটতি পূরণেই অভিবাসনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

Make UK-এর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ফিপসন বলেন, “যুক্তরাজ্যে দক্ষ শ্রমিক না থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা নেওয়া সম্ভব নয়। দেশীয় প্রশিক্ষণব্যবস্থা ভাঙাচোরা।”

সরকার একদিকে অভিবাসন সংখ্যা কমাতে চায়, অপরদিকে অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত এই অভিবাসনের উপর নির্ভরশীল।
সংখ্যা কমাতে গিয়ে যেন অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর না হয়—সেই ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
১৪ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি

বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাত জোরদারে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত

ভিড় বেড়েছে লন্ডনের প্রপার্টি মার্কেটে

নিউজ ডেস্ক