যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি জানুয়ারিতে ০.১% সংকুচিত হয়েছে, যা যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদদের জন্য এটি একটি বিস্ময় ছিল, কারণ তারা জানুয়ারিতে ০.১% প্রবৃদ্ধি আশা করেছিল। কিন্তু ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস অফিসের (ONS) তথ্য দেখিয়েছে যে পরিষেবা খাত শিল্প খাতের পতন পুষিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং গত মাসের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদন খাত ১.১% হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ০.৭% প্রবৃদ্ধির বিপরীত। নির্মাণ খাতও অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, কারণ শীতকালীন আবহাওয়ার কারণে গৃহনির্মাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
পরিষেবা খাতে মাত্র ০.১% বৃদ্ধি হয়েছে, যেখানে আতিথেয়তা (হসপিটালিটি) ও শিল্প-সংস্কৃতি (আর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট) খাতের পতন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওএনএস জানিয়েছে যে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুমানিকভাবে ০.২% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের তুলনায় বেশি।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অর্থনীতি ০.৪% প্রসারিত হয়েছিল, যা বছরের শেষ প্রান্তিকে ০.১% প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করেছিল এবং দুই প্রান্তিকে শূন্য প্রবৃদ্ধি এড়াতে সক্ষম হয়েছিল।
কেপিএমজি ইউকে-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ায়েল সেলফিন বলেছেন, “বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা অর্থনীতির ভবিষ্যতের উপর ছায়া ফেলেছে, যা বছরের শুরুতেই যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে দুর্বল অবস্থানে নিয়ে এসেছে।”
র্যাচেল রিভস বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে মন্দার জন্য দায়ী করেছেন এবং বলেছেন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।
তিনি বলেন, “বিশ্ব পরিবর্তিত হয়েছে, এবং বিশ্বজুড়ে আমরা এর প্রভাব অনুভব করছি। এ কারণেই আমরা আমাদের দেশকে সুরক্ষিত করতে, জনসেবায় সংস্কার আনতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে আরও দ্রুত এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
এবং এ কারণেই আমরা শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছি।”
বেশিরভাগ ব্যবসায়িক জরিপে দেখা গেছে যে কোম্পানিগুলো নতুন কর্মী নিয়োগ স্থগিত করছে এবং মূলধন সংরক্ষণের জন্য বিনিয়োগে বিলম্ব করছে। ব্যবসায়ী লবিগুলো উল্লেখ করেছে যে আসন্ন ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বৃদ্ধির হার এবং এপ্রিল মাসে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির চাপ বোর্ডরুমের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে।
সরকারি ব্যয়ের প্রকল্পগুলো বিলম্বিত হয়েছে কারণ মন্ত্রীরা পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকারের পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা করছেন। ২৬ মার্চের বিবৃতিতে চ্যান্সেলর সরকারি কল্যাণ ব্যয় কাটছাঁটের ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ছায়া চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইড বলেছেন, “২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে প্রায় কোনো প্রবৃদ্ধি না থাকায় এটি আশ্চর্যের কিছু নয়, অর্থনীতি আবারও হ্রাস পাচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, গত অক্টোবরের বাজেট ব্যবসায়িক আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। “ব্রিটেন সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য দেওয়া, কর বাড়িয়ে রেকর্ড পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং কঠিন শ্রম আইন প্রণয়ন করার মাধ্যমে এই সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শত্রু হয়ে উঠেছে।
EY আইটেম ক্লাবের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ম্যাট সোয়ানেল বলেছেন মাসিক জিডিপির তথ্য অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে।
ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী হার দেখা যাওয়ায়, জানুয়ারিতে কিছুটা পতন আশা করা হয়েছিল।
২০২৪ সালের শেষ দিকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ভিত্তি থেকে, আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ০.৩% হবে, যা আগের ছয় মাসের তুলনায় ভালো।”
গত এক মাসে ব্রিটিশ পাউন্ড শক্তিশালী হয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা ডলার বিক্রি করেছে। তবে শুক্রবার এটি ০.১৯% হ্রাস পেয়ে ১.২৯২১ ডলার হয়েছে, যদিও সপ্তাহের হিসাবে এটি এখনও কিছুটা শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদের হার সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা মাত্র ৮%— যা বৃহস্পতিবার ৭% ছিল। আগামী সপ্তাহে হার ৪.৫% ধরে রাখা হতে পারে, এবং মে মাসে এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমানো হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (NIESR) ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৪% থেকে ০.৩%-এ নামিয়ে এনেছে। তবে এটি এখনও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস (০.১%) থেকে অনেক বেশি।
অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছেন যে ২০২৪ সালের শেষার্ধের দুর্বল প্রবৃদ্ধির পর, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো দুর্বল।
NIESR-এর অর্থনীতিবিদ হেইলি লো বলেছেন, “আসন্ন বসন্তকালীন বিবৃতিতে নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করতে পারে, যখন স্বচ্ছতা ও স্থায়িত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৫ মার্চ ২০২৫