যুক্তরাজ্যে গত এক বছরে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। অভিবাসন নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের মাঝেই এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছরে যুক্তরাজ্যে মোট এক লাখ ১১ হাজার ৮৪টি আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে। দেশটির সরকার বলছে, ২০০১ সালের পর গত ১২ মাসে সর্বোচ্চসংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্রিটেনের রাজনীতিতে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কিয়ার স্টারমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।
রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর আগমনের খবরে রাজনৈতিক দল রিফর্ম ইউকের নাইজেল ফারাজ বলেন, ব্রিটেনের রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, তথাপি এই দুর্যোগ আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, আমরা ব্রিটেনের ভিসা এবং ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছি এবং ফেরত পাঠানোর সংখ্যাও বাড়িয়েছি। আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সরকার আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। আবেদনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাও কমে এসেছে।
সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জুনে শেষ পর্যন্ত সময়ে ৯১ হাজার আশ্রয়প্রার্থী সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ২৪ ভাগ কম বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
১৯৯৯ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত এক আইন অনুযায়ী, ঝুঁকিতে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত সরকারকে তাদের জন্য থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়।
আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাজার হাজার প্রার্থীকে এরইমধ্যে বিভিন্ন হোটেলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জুন পর্যন্ত সময়ে মোট ৩২ হাজার ৫৯ জন আশ্রয়প্রার্থীকে বিভিন্ন হোটেলে থাকার জায়গা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা আট ভাগ বেশি।
অভিবাসন বিষয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কনজারভেটিভ পার্টি। দলটির স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র ক্রিস ফিলিপ বলেন, লেবার পার্টি (ক্ষমতায় থাকা দল) আমাদের সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে এবং অভিবাসন সংকট তাদেরকে গিলে ফেলেছে।
অবশ্য সরকার বলছে, অভিবাসনের এই সংকট তারা আগের সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে। বর্তমান অবস্থার সামলাতে কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি সরকারের। হিসেব অনুযায়ী, আশ্রয়প্রদান বিষয়ে সরকারের খরচ ২০২৪-২৫ সালে তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ কমেছে।
গত বছরের জুলাইয়ে কিয়ার স্টারমার দায়িত্ব নেওয়ার পর মোট ৫০ হাজার আশ্রয়প্রার্থী সাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। এরমধ্যে চলতি বছর এই পথে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন ২৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থী।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, অনিয়মিত অভিবাসীর আগমন ২৭ ভাগ বেড়েছে। অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীদের ৮৮ ভাগই চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তারাজ্যে পৌঁছান বলে জানা গেছে।
সূত্রঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস
এম.কে
২৪ আগস্ট ২০২৫