ব্রিটেনের প্রায় প্রতিটি বড় শহরের মতো লন্ডনের রাস্তায় এখন গাঁজার গন্ধ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। এই মাদক সেবনের বিস্তার নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা। সমারসেট পুলিশের সাবেক চিফ কনস্টেবল সার অ্যান্ডি মার্শ বলেছেন, রাস্তায় গাঁজার গন্ধ তাকে নিজের এলাকাতেই অনিরাপদ বোধ করায়।
তার এই উদ্বেগে সায় দিয়েছেন আরও বহু চিফ কনস্টেবল। সাধারণ মানুষকেও প্রায়ই রাস্তায় হাঁটার সময় বা পার্কে বসে থাকার সময় গাঁজার গন্ধের সম্মুখীন হতে হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিকদের অনেকেই গাঁজার ব্যবহারের ব্যাপারে নরম অবস্থান নিয়েছেন। ক্লাস বি মাদক হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও এর ব্যবহারকে অনেক সময় তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান সম্প্রতি গাঁজার অল্প পরিমাণে দখলের ক্ষেত্রে ডিক্রিমিনালাইজেশনের (শাস্তিমুক্ত) প্রস্তাব দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, গাঁজার সেবন এতটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে যে পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আরও বড় সামাজিক সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে—এই চিন্তা থেকেই তার এমন প্রস্তাব।
গাঁজার সেবনের আইনি ও চিকিৎসাগত ব্যবহার নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এপিলেপসি ও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগীদের জন্য প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা গাঁজা দেওয়া হলেও, এর বাইরের অবাধ ব্যবহার সমাজে গাঁজাকে একটি নিরীহ উপাদান হিসেবে তুলে ধরছে।
বাস্তবতা হলো, গাঁজা বিক্রেতারা অনেকসময় মানব পাচার বা অস্ত্র ব্যবসার মতো অপরাধের সঙ্গেও যুক্ত। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে তিনটি গাঁজা ফার্মে সাম্প্রতিক পুলিশের অভিযান তা-ই প্রমাণ করে, যেখানে মানব পাচারের চক্রের সম্পৃক্ততা ছিল সন্দেহভাজন।
রাস্তায় সিগারেটের মতো গাঁজা সেবন এখন সাধারণ চিত্র হলেও, এর সঙ্গে মানসিক সমস্যা, সাইকোসিস, ড্রাগ ড্রাইভিংয়ের মতো গুরুতর বিষয়গুলো জড়িত। ব্রিটেনে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট ক্রমবর্ধমান, যার একটি বড় কারণ হিসেবে গাঁজার অবাধ ব্যবহারকেও দায়ী করা হচ্ছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্যমতে, ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ব্রিটিশদের ৭.৬ শতাংশ গত এক বছরে গাঁজা সেবন করেছেন। কিন্তু এতো বড় চিত্র দেখেও পুলিশ যেন আইন প্রয়োগে অক্ষম। কারণ, গাঁজা সেবনের অভিযোগে কাউকে তল্লাশি করলেই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও চাকুরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়।
পুলিশ ফেডারেশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ব্রায়ান বুথ সতর্ক করে বলেন, অফিসাররা “ভয়ে থাকেন”—যদি গাঁজার গন্ধ পেয়ে কাউকে থামিয়ে তল্লাশি করেন, তাহলে হয়তো চাকুরি নিয়েই টানাটানি শুরু হবে।
এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে ‘স্টপ অ্যান্ড সার্চ’ পদ্ধতির কমে যাওয়া। একদিকে শীর্ষ কর্মকর্তারা কড়া অবস্থানের কথা বললেও, ফ্রন্টলাইনের অফিসাররা সঠিক সহায়তা ও নৈতিক সমর্থন না পাওয়ায় কার্যত হাত-পা গুটিয়ে আছেন।
বিশ্লেষকদের মতে গাঁজার ব্যাপকতা শুধু অপরাধই বাড়াচ্ছে না, সমাজে নিরাপত্তাহীনতার এক অদৃশ্য বাতাবরণও তৈরি করছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সাহসী রাজনৈতিক অবস্থান, পুলিশের পূর্ণ সহায়তা এবং আইন প্রয়োগে সমন্বিত পদক্ষেপ। নয়তো গাঁজার গন্ধের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে একটি গোটা প্রজন্ম।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
১৩ জুলাই ২০২৫