15.3 C
London
October 5, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ঘর হতে উচ্ছেদ ঠেকাতে আদালতে লড়ছেন এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি  পরিবার

ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের রিডিং এলাকায় অবসরপ্রাপ্তদের জন্য নির্ধারিত একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করায় বিতর্কের মুখে পড়েছেন এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি শহিদুল হক। তিনি দাবি করছেন, বড় বাসা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ওই ফ্ল্যাট ছাড়বেন না এবং উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার আইনের আশ্রয় নেবেন।

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের শহিদুল হক ৫৯ বছর বয়সী। শহিদুল হক স্লিপ অ্যাপনিয়া ও বিষণ্নতার কারণে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। গত জুলাই মাসে তিনি অবসরের জন্য নির্ধারিত ডেভিড স্মিথ কোর্টের একটি একক কক্ষ ফ্ল্যাটে ওঠেন। তবে পাঁচ মাসের মধ্যেই তিনি ২৮ বছর বয়সী দ্বিতীয় স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা মনি ও তাদের তিন বছরের যমজ কন্যাকে সেখানে নিয়ে আসেন।

সাউদার্ন হাউজিং, যারা ফ্ল্যাটটির মালিক, জানিয়েছে—শহিদুল ভাড়ার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তারা আদালতে মামলা করেছে ফ্ল্যাট ফেরত পেতে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই পরিবারের কারণে অতিরিক্ত শব্দ, শিশুদের অসচেতন আচরণ এবং জরুরি কর্ড টানা–সহ নানা সমস্যায় পড়ছেন তারা।

তবে শহিদুল দাবি করেছেন, ইংরেজি ভালোভাবে না বোঝায় তিনি বুঝতে পারেননি যে পরিবার নিয়ে ফ্ল্যাটে থাকা যাবে না। তার আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দিয়েছেন, চুক্তির শর্তাবলি কখনও তার মাতৃভাষা সিলেটিতে অনুবাদ বা ব্যাখ্যা করা হয়নি। ফলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা এখানে থাকতে বাধ্য, কারণ আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তবে এই ফ্ল্যাট পরিবার–পরিজনের জন্য উপযুক্ত নয়, এটি একা মানুষের জন্য তৈরি। বড় কোনো বাসা পেলে আমরা সরে যাব।”

শহিদুল ১৯৯৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং দাবি করেন তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে। প্রথম স্ত্রী ও সাত সন্তান নিয়ে তিনি লন্ডনের প্লেইস্টোয় চার শোবার ঘরের বাড়িতে থাকতেন। তালাকের পর তিনি গৃহহীন হয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে স্যোশাল  হাউজিংয়ের মাধ্যমে রিডিংয়ে স্থানান্তরিত হন।

তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও যমজ কন্যারা সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন। সন্তানরা ব্রিটিশ নাগরিক এবং স্ত্রী রয়েছেন স্পাউস ভিসায়। বর্তমানে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্লিপ অ্যাপনিয়া ও বিষণ্নতায় ভুগছেন এবং প্রতিবন্ধী ভাতায় জীবনযাপন করছেন।

সাউদার্ন হাউজিংয়ের আইনজীবী তাইও তেমিলাদে আদালতে বলেন, শিশুদের আচরণ ও শব্দ অন্যান্য বাসিন্দাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে শহিদুল দাবি করেন, তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সন্তানদের শান্ত রাখতে এবং জরুরি কর্ড টানা ঠেকাতে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

তার আইনজীবী আদালতে যুক্তি দেন, প্রতিবন্ধী ও কম আয়ের অবস্থায় উচ্ছেদ শহিদুল ও তার পরিবারের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। এতে তার স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে, যা মানবাধিকার আইনের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।

গত ৪ আগস্ট আদালতে শুনানিতে বিচারক সাইমন লিন্ডসে তাৎক্ষণিক উচ্ছেদের আদেশ দেননি। তিনি বলেন, “মূলত এ ফ্ল্যাটে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে থাকা উচিত নয়, তবে কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হলো তা পরিষ্কার নয়। বিষয়টি পরবর্তী সময়ে দেখা হবে।”

রিডিং বরো কাউন্সিলের কনজারভেটিভ কাউন্সিলর ইসোবেল বলসডন ঘটনাটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “অবসরপ্রাপ্তদের জন্য তৈরি বাসায় পরিবার রাখা যায় না, এটি সিস্টেমকে কাজে লাগানোর চেষ্টা।”

অন্য এক কাউন্সিলর রাজ সিং মন্তব্য করেন, “যিনি ফর্ম পূরণ করে আশ্রয় ও বাসার আবেদন করতে পারেন, তিনি কীভাবে দাবি করেন যে চুক্তির শর্ত বুঝতে পারেননি—এটি আমার কাছে অযৌক্তিক।”

এদিকে ব্রিটিশ অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, লেবার সরকার ক্ষমতায় এলে মানবাধিকার কনভেনশনের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা পরিবর্তনে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে। কারণ, বহু অভিবাসী ও অপরাধী এই ধারা ব্যবহার করে উচ্ছেদ ও বহিষ্কার ঠেকাচ্ছে।

সূত্রঃ ডেইলি মেইল

এম.কে
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

সংখ্যালঘুদের জন্য যুক্তরাজ্যে সবসময়ই দুইস্তরের বিচার ব্যবস্থা ছিল

যুক্তরাজ্যে বাস-ট্রেনে জোরে কথা নয়, হেডফোন ব্যবহার করুনঃ নতুন বার্তা TfL-এর

ফুটপাতে ঘুমানো আর অপরাধ নয়, যুক্তরাজ্যে বাতিল হচ্ছে ২০০ বছরের পুরোনো আইন