লন্ডনের এক ফিলিস্তিনি নার্স অভিযোগ করেছেন, ভিডিও কলে তরমুজের ছবি থাকা মাত্রই কর্তৃপক্ষ সেটিকে “ইহুদিবিদ্বেষী প্রতীক” বলে দাবি করে এবং তা সরাতে নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় তিনি তার নিয়োগকর্তা স্বাস্থ্য ট্রাস্টের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।
আহমাদ বেকার নামের এই নার্সের দাবি, তরমুজ ফিলিস্তিনের প্রতীক হয়ে উঠেছে, কারণ ফিলিস্তিনি পতাকা নিষিদ্ধ করার পর এরই রঙে মিল থাকায় বিশ্বজুড়ে এটি ফিলিস্তিনি পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ একটি নিস্তরঙ্গ ফলের ছবি নিয়ে এমন কঠোরতা অনভিপ্রেত ও অপমানজনক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মার্চ মাসে বার্টস হেলথ নামের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ একটি নতুন পোশাক ও আচরণবিধি চালু করে, যেখানে বলা হয়—কর্মক্ষেত্রে বা ঘরে বসে কর্মরত অবস্থায়ও কেউ কোনো জাতীয় বা রাজনৈতিক প্রতীক দেখাতে পারবেন না। এই নিয়ম কম্পিউটার, মোবাইল বা ভিডিও কলে ব্যবহৃত ব্যাকগ্রাউন্ডেও প্রযোজ্য।
এই নির্দেশনার পেছনে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, সংস্থাটি সব নাগরিকের জন্য নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন সেবা নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু যারা মানবিক সংকটে থাকা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে চান, তাদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ তুলছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা।
আহমাদ বেকার বলেন, “একজন ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ ও নিপীড়িতদের প্রতি সংহতি জানানোর অধিকার আমার থাকা উচিত। দীর্ঘ এক দশকের বেশি এনএইচএস-এ কাজ করছি—কিন্তু এমন নিষেধাজ্ঞা কখনো কল্পনা করিনি।”
এই মামলায় তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আর দুই চিকিৎসক—বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আরাশ সালেহ এবং রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সারা আলি। তাদের দাবি, এই নীতিমালা ২০১০ সালের ‘সমতা আইন’-এর লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিশ্বাসের ওপর একটি কাঠামোগত আঘাত।
তাদের মতে, একদিকে প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রতি সামান্য সমর্থনকেও রাজনৈতিক পক্ষপাত বলে চিহ্নিত করছে—এটি দ্বিমুখী আচরণ এবং স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব।
আইনি চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ট্রাস্ট নীতিমালা তৈরির সময় একটি প্রভাবশালী ইসরায়েলপন্থী সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শ করেছে, কিন্তু নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি।
ডা. সালেহ বলেন, “যখন বাইরের একটি গোষ্ঠী নীতিমালার খবর আগেভাগেই প্রকাশ করে, অথচ আমরা কর্মীরা কিছুই জানি না—তখন স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।”
তারা চাইছেন, এই বৈষম্যমূলক বিধি বাতিল হোক, আদালত এ বিষয়ে মতপ্রকাশ করুক এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক যন্ত্রণার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র জানান, “আমরা বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মীদের দুঃখ-বেদনা বুঝি এবং তাদের কল্যাণে সবসময় পাশে আছি। তবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব রোগীর সেবা, যেখানে নিরপেক্ষতা ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ জুন ২০২৫