মায়ের নেতৃত্বে একটি পুরো পরিবারকে ব্যবহার করে প্রায় £৫০ লক্ষ মূল্যের কোকেন যুক্তরাজ্যে পাচারের চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে বার্মিংহাম এয়ারপোর্টে। ৫৪ বছর বয়সী ফারজানা কাওসার নিজেই তার পাঁচ সন্তানকে মেক্সিকো থেকে কোকেন এনে ইংল্যান্ডে ঢুকানোর কাজে নিয়োজিত করেন।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে অন্তত পাঁচবার এই পরিবার একই কৌশলে কোকেন পাচার করে। তারা প্রথমে লাগেজ ছাড়া ডাবলিন বা আমস্টারডামে এক-দুই রাতের ভ্রমণের টিকিট কেটে যেত। ফেরার সময় তারা এমন সময় ফ্লাইট নিত, যখন মেক্সিকোর কানকুন থেকে ফ্লাইট আসত বার্মিংহাম এয়ারপোর্টে।
ফেরার পর তারা নিজেদের ফ্লাইটের লাগেজ বেল্টে না গিয়ে সরাসরি কানকুন থেকে আসা ফ্লাইটের বেল্টে যেত এবং সেখান থেকে কোকেনভর্তি স্যুটকেস তুলে নিয়ে এমনভাবে বের হতো যেন ওগুলো তাদের নিজেদের লাগেজ।
শেষ পর্যন্ত ১১ নভেম্বর ২০২৪-এ এই অপারেশন ভেস্তে যায়, যখন জাতীয় অপরাধ সংস্থা (NCA) বার্মিংহাম এয়ারপোর্টের বাইরে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ছয়টি স্যুটকেসে মোট ১৮০ কেজি উচ্চমাত্রার কোকেন উদ্ধার করা হয়।
এই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন ফারজানা কাওসার, যিনি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তার সন্তানদের মাদক চোরাচালানের প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা দেন। এই পরিবারের সবচেয়ে অল্পবয়সী সন্তান মাত্র ১৭ বছর বয়সে মাদকচক্রে যুক্ত হয়ে পড়ে।
এই চক্রে শুধু একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন পরিবারের বাইরের, খালেদ আবদুলকাউই। তিনি অন্য একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের হয়ে কুরিয়ারের কাজ করতেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরাঃ
ফারজানা কাওসার – ১৩ বছর ৪ মাস
সাফা নূর (১৯) – ৭ বছর ২ মাস
মোহাম্মদ আমির শাফাক (২৮) – ৮ বছর ৯ মাস
উমায়ের মোহাম্মদ (২২) – ৮ বছর ১ মাস
জুনায়েদ শাফাক (৩৩) – ১০ বছর ৯ মাস
খালেদ আবদুলকাউই (৩৬) – ১০ বছর ৯ মাস
অতিরিক্তভাবে,
হামজা শাফাক (১৮) – সাজা ঘোষণা হবে ২০২৫ সালের অক্টোবরে
সারাহ হোসেন (২৭) – দুই বছরের স্থগিত দণ্ড
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, এটি ছিল একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত ও জটিল মাদক চোরাচালান প্রক্রিয়া। একজন মা যেভাবে তার সন্তানদের এই অপরাধে জড়িয়ে ফেলেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও ভয়ংকর।
এনসিএ-র সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর রিক ম্যাকেঞ্জি বলেন, “ফারজানা কাওসার বাইরের দুনিয়ায় একজন স্নেহময়ী মা হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবে তিনি ছিলেন পেশাদার কোকেন পাচারকারী। নিজের সন্তানদের হাতে মাদক তুলে দিয়ে তিনি তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই অপরাধচক্রের কারণে কোকেন যুক্তরাজ্যের বহু শহরে ছড়িয়ে পড়ত, যার সঙ্গে সহিংসতা, আসক্তি ও অপরাধের সরাসরি যোগ রয়েছে। এই চক্র ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে বড় পরিমাণ মাদক সরবরাহ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।”
সূত্রঃ বার্মিংহাম লাইভ
এম.কে
২০ জুলাই ২০২৫