যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, বাড়ির মালিকেরা অক্টোবর মাস থেকে ইংল্যান্ডের সামাজিক বাসস্থানে স্যাঁতসেঁতে ও ছত্রাকের সমস্যাগুলি তদন্ত করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মেরামত করতে বাধ্য হবেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাম্পেইনাররা এই সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। কারণ ২০২০ সালে দুই বছরের শিশু আওয়াব ইশাক রোচডেলের নিজের বাসায় ছত্রাকজনিত ইনফেকশনে মারা যায়।
তবে, “আওয়াবের আইন” নামে পরিচিত এই পরিবর্তন ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা যায়। তাছাড়া ঘরের অন্যান্য বিপদ, যেমন কাঠামোগত ও বৈদ্যুতিক সমস্যাগুলোর সময়সীমা ২০২৬ সালের আগে কার্যকর হবে না।
আবাসন দাতব্য সংস্থা শেল্টার বলেছে, এই বিলম্ব “ভাড়াটিয়াদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য প্রকৃত ঝুঁকি সৃষ্টি করে এবং জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে”।
তবে অক্টোবর থেকে স্যোশাল হাউজিংয়ের মালিকদের—২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব জরুরি বিপদ বা কাঠামোগত সমস্যা মেরামত করতে হবে।
পূর্বের কনজারভেটিভ সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী স্যোশাল হাউজিংয়ের মালিকদের বাড়ির যেকোনো সমস্যা জানার ১৪ দিনের মধ্যে তদন্ত করে মেরামতের সময়সীমা নির্ধারণ করার নিয়ম ছিল।
সে প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল, যদি স্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি থাকে, তাহলে মেরামত কাজ ৭ দিনের মধ্যে শুরু করতে হবে।
যেসব বাড়ির মালিক এই নিয়ম মানতে ব্যর্থ হবেন, তারা আদালতে তলব হতে পারেন এবং ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবেন।
একটি লিখিত বিবৃতিতে, উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার বলেছেন, ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করার ফলে স্যাঁতসেঁতে ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দ্রুত কার্যকর হবে এবং এই পরিবর্তন কার্যকরভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য একটি পরীক্ষামূলক সময় দেওয়া হবে।
সরকার জানিয়েছে স্যোশাল হাউজিংয়ের মালিকদের ইতোমধ্যেই তাদের বাসাগুলোকে বাসযোগ্য ও বিপদমুক্ত রাখার দায়িত্ব রয়েছে।
“আওয়াবের আইন” প্রথম ২০২৩ সালের জুলাই মাসে পূর্বের কনজারভেটিভ সরকারের অধীনে পাস হয়েছিল, কিন্তু এখনো কার্যকর করা হয়নি।
শেল্টারের প্রধান নির্বাহী পলি নীট বলেছেন, সর্বশেষ এই ঘোষণার অর্থ হলো সামাজিক বাসস্থানের ভাড়াটিয়াদের এই গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষার জন্য আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “সরকারকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং আওয়াবের আইন সম্পূর্ণরূপে ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।”
ন্যাশনাল হাউজিং ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী কেট হেন্ডারসন বলেছেন, তাদের সংস্থা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আওয়াব ইশাকের করুণ মৃত্যুর মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে এবং সব ঘর যেন গুরুতর বিপদ হতে মুক্ত হয়।
তবে, তিনি বলেন যে আবাসন সমিতিগুলো “অভূতপূর্ব আর্থিক চাপে” রয়েছে। তাছাড়া অধিক জনসংখ্যা স্যাঁতসেঁতে ও ছত্রাক সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র নতুন সামাজিক বাসস্থানের জন্য তহবিলের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা যেতে পারে।
সরকার রেন্টার্স’ রাইটস বিলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভাড়ায় থাকা বাসাগুলোর জন্যও আওয়াবের আইন সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছে, যা বর্তমানে সংসদে বিবেচিত হবে।
ইংলিশ হাউজিং সার্ভে অনুসারে ব্যক্তিগত ভাড়ার বাসাগুলিতে স্যাঁতসেঁতে সমস্যা বেশি দেখা যায়। ২০২৩ সালে ৯% বাসা এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ছিল, যেখানে সামাজিক বাসস্থানে এটি ছিল ৭%।
আবাসন সচিব রেইনার বলেন, “আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো এটা নিশ্চিত করা আওয়াব ইশাকের মৃত্যুর মতো ট্র্যাজেডি আর যেন না ঘটে।
বাড়ির মালিকদের বিপজ্জনক বাসা ভাড়া দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না এবং তাদের ভাড়াটিয়াদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫