যুক্তরাজ্যে একজন অসহায় আশ্রয়প্রার্থী, সন্তান জন্মদানের পর এনএইচএস থেকে ১০,০০০ পাউন্ডেরও বেশি বিল পরিশোধে চাপে পড়েছেন। যিনি এই বিল পরিশোধে মাসে মাত্র এক পেনি দিতে সক্ষম বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা যায়। এর প্রেক্ষিতে অভিবাসীদের জন্য এনএইচএস মাতৃত্বকালীন চার্জিং ব্যবস্থার জরুরি পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৩৪ বছর বয়সী কিম (নাম পরিবর্তিত), জরুরি সিজারিয়ান অপারেশনের পর বিল হাতে পান এবং পরে একটি ঋণ প্রদানকারীকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেন।
যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতিদিন মাথাপিছু প্রায় ৭ পাউন্ড দেওয়া হয় খাবার, কাপড়, যোগাযোগ ও টয়লেট সামগ্রীর জন্য, এবং যাদের ছোট শিশু আছে তাদের জন্য “হেলদি ফুড” এর জন্য সামান্য টপ-আপ ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে — তারা এনএইচএসের খরচ পুনরুদ্ধার কর্মসূচির আওতায় এনএইচএস চার্জ থেকে অব্যাহতি পান। এই স্কিমটি প্রথম চালু করে কনজারভেটিভ সরকার, প্রায় দশ বছর আগে।
তবে গর্ভাবস্থায় এনএইচএসের ফ্রি সেবা পাওয়ার অধিকার থাকা অনেক নারীকে ভুলভাবে চার্জ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রেগন্যান্সি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান Maternity Action।
কিমের মামলাটি জটিল হয়ে পড়ে তার অভিবাসন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে। তিনি প্রথমবার ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেন। তবে তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়।
২০২১ সালে তিনি গর্ভবতী হন এবং নতুন করে আশ্রয়ের আবেদন করেন।
২০২২ সালের মার্চে কন্যাসন্তান জন্মের সময় তার আশ্রয়ের আবেদন সক্রিয় ছিল বিধায় তিনি এনএইচএস চার্জমুক্ত থাকার কথা। তবে লিডস টিচিং হসপিটালস এনএইচএস ট্রাস্ট (LTHT) মাতৃত্বকালীন সেবার জন্য তাকে £১০,৭০৩.২৩ পাউন্ডের বিল পাঠায়।
লিডস টিচিং হসপিটালস এনএইচএস ট্রাস্ট আরও জানায়, পূর্ববর্তী ভর্তি ও চিকিৎসার জন্য তার কাছে অতিরিক্ত £৩,৪৫০ পাওনা আছে ট্রাস্টের। যা তার প্রথম আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরের সময়কালের।
কিম, লিডস টিচিং হসপিটালস এনএইচএস ট্রাস্ট-কে চিঠি লিখে জানান: “আমার জন্য কাজ করা আইনত নিষিদ্ধ এবং আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই।
আমি মাসে £০.০১ পে করার প্রস্তাব দিচ্ছি। আমি লজ্জিত যে এর বেশি দিতে পারছি না। এটুকু দেওয়াও আমার জন্য কষ্টকর। এর বেশি দিতে হলে আমি বেআইনিভাবে টাকা জোগাড় করার চাপে পড়ব।”
লিডস টিচিং হসপিটালস এনএইচএস ট্রাস্ট কিমকে দুঃখ প্রকাশ করে পরবর্তীতে চিঠি প্রদান করে। তারা জানায় ট্রাস্ট “আপডেটেড তথ্য পেয়ে” বিল বাতিল করেছে। আপডেটেড তথ্যানুযায়ী কিমের চার্জমুক্ত থাকার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে বলেও নিশ্চিত করে ট্রাস্ট।
ট্রাস্টের চিফ মেডিকেল অফিসার ম্যাগনাস হ্যারিসন বলেন: “কোনো রোগীর এনএইচএস চিকিৎসার জন্য চার্জ প্রযোজ্য হলে এবং পরে তার যোগ্যতা পরিবর্তিত হলেও, পূর্ববর্তী চার্জগুলো বহাল থাকে। তবে যদি কোনো রোগী অসহায় বা তীব্র দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে ট্রাস্ট সাময়িকভাবে দেনা আদায় বন্ধ রাখতে পারে।”
যুক্তরাজ্যে গর্ভবতী নারীদের ১০ সপ্তাহের মধ্যেই প্রথম অ্যাণ্টিনেটাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কিন্তু চার্জের ভয়ে কিম চার মাস পর্যন্ত চিকিৎসা নেননি বলে জানা যায়।
Maternity Action-এর প্রধান নীতিনির্ধারক জুডিথ ডেনিস বলেন: “নিয়ম ভুলভাবে বাস্তবায়িত হলে নারীরা যথাযথভাবে গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী চিকিৎসা নিতে ভয় পান। এর ফলে মাতৃত্বকালীন নিরাপত্তা এবং মা-শিশুর স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে।”
Doctors of the World-এর প্রধান নীতিনির্ধারক আনা মিলার বলেন, অভিবাসীদের চার্জ করা মানে শিশুদের ‘ঋণের বোঝা নিয়ে’ জন্ম নেওয়া। অথচ এতে সাশ্রয়ের কোনো প্রমাণ নেই বরং মানুষ চিকিৎসা এড়াতে বাধ্য হচ্ছে এই ব্যবস্থার কারণে।
কিম বলেন, “বিল পাওয়ার পর আমি খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি এক নতুন মা, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলাম শিশুকে। সিজারিয়ানের পর সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছি, আর এদিকে বিল প্রদানের চাপ ছিল তার মাঝে ছোট একটা বাচ্চাকে বাঁচানোর সংগ্রাম ছিল।”
তথ্যসূত্র মতে জানা যায়, এখনো কিম আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসনে আছেন। যেখানে বাসিন্দারা ছত্রাক এবং আরশোলার আক্রমণ নিয়ে বিস্তার অভিযোগ করেছেন। কিম এখনো তার এসাইলাম কেইসের আবেদনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন এবং নার্সিং পড়ার আশায় কলেজে যাচ্ছেন।
NCT চায় মাতৃত্বকালীন চার্জিংয়ের প্রভাব খতিয়ে দেখা হোক এবং গর্ভবতী অভিবাসী নারীদের জন্য দোভাষী ও “নিরাপদ আবাসন” নিশ্চিত করা হোক।
NCT-এর প্রোগ্রাম প্রধান হেলেন লয়েড বলেন: “এনএইচএস চার্জের হুমকি এমন নারীদের জন্য এক বৈরী পরিবেশ তৈরি করে, যাদের অভিবাসন পরিস্থিতি অনিশ্চিত।”
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন অবশ্যই কঠোর মানদণ্ড পূরণ করতে হবে, এবং তা নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।
এনএইচএস একটি বসবাসভিত্তিক সেবা এবং এখানে আইনসম্মতভাবে বসবাস করছেন না বা চার্জ থেকে মুক্ত নয়, তাদের চিকিৎসার খরচ বহনে অবদান রাখা উচিত।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৪ এপ্রিল ২০২৫