ব্রিটিশ সরকারের নতুন ‘অর্জিত বসবাস মর্যাদা’ পরিকল্পনা প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যে অভিবাসী কমিউনিটিতে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রাথমিক কাঠামো বিশেষ করে স্বল্প আয়ের ভিসাধারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে কেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য সম্ভাব্য ১৫ বছরের অপেক্ষার সময়সীমা। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হেলথ ও সোশ্যাল কেয়ার ভিসায় আসা প্রায় ছয় লাখ ১৬ হাজার মানুষের জন্য এই প্রস্তাব স্থায়ী হওয়ার পথকে কঠিন করে তুলতে পারে। এর মধ্যে অন্তত এক লাখ বাংলাদেশিও আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পাশাপাশি ছয়বার ভিসা নবায়নের ঝক্কি তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
নতুন প্রস্তাবে রেট্রোস্পেকটিভ বা পেছনের তারিখ থেকে কার্যকর হওয়ার বিষয়টি আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যারা নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ব্রিটেনে এসেছেন, তাদের ওপর নতুন শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরা অসাংবিধানিক ও অমানবিক বলে মনে করছেন। ২০০৮ সালের বিখ্যাত এইচএসএমপি মামলার রায়ে আদালত বলেছিল, সরকার নাগরিকদের ‘বৈধ প্রত্যাশা’ ভঙ্গ করতে পারে না—আর তাই এই প্রস্তাব জুডিশিয়াল রিভিউতে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
অভিবাসন কমানোর দাবিতে রিফর্ম ইউকের জনপ্রিয়তা বাড়ায় লেবার সরকারও এখন চাপের মুখে। নিজেদের কঠোর দেখাতে তারা অভিবাসনসংক্রান্ত নিয়ম কঠিন করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রস্তাবে ভাতানির্ভরদের জন্য ২০ বছর এবং ভিসামেয়াদোত্তীর্ণ বা অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য ৩০ বছরের অপেক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে নির্দিষ্ট এক ভোটারগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি অর্থনীতি ও কেয়ার সেক্টরের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এদিকে সরকার জানে, এত কঠোর প্রস্তাব টিকিয়ে রাখা রাজনৈতিকভাবে কঠিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৫ বছর সময়সীমা নির্ধারণের নেপথ্যে ‘অ্যাঙ্করিং’ বা দর-কষাকষির মনস্তাত্ত্বিক কৌশল কাজ করছে। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার পর সরকার হয়তো “সমঝোতার” নাটক সাজিয়ে ১০ বছরের সময়সীমায় ফিরে আসতে পারে। এতে একদিকে তারা কঠোরতা দেখাতে পারবে, অন্যদিকে নিজেদের নমনীয় বলেও উপস্থাপন করতে পারবে।
যদিও খসড়ায় স্থায়ী বসবাস পাওয়া অভিবাসীদের বেনিফিট বন্ধ রাখাসহ কঠোর প্রস্তাব রয়েছে, মনে রাখতে হবে এটি এখনও কেবল কনসালটেশন পর্যায়ে। চূড়ান্ত আইন হতে গেলে মানবাধিকার, শ্রমবাজার সংকট ও আদালতের নজির—সবকিছু বিবেচনায় রাখতে হবে লেবার সরকারকে। অভিবাসীদের প্রতি পরামর্শ হলো—সতর্ক থাকা, সংগঠিত হওয়া এবং আইনি প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রাখা। কেয়ার সেক্টর ব্রিটেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই লড়াই কেবল শুরু হয়েছে মাত্র।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে

