যুক্তরাজ্যের আবাসন বাজার গত জুনে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে, যেখানে গড় বাড়ির মূল্য মে মাসের তুলনায় কোনো পরিবর্তন দেখায়নি। হ্যালিফ্যাক্স হাউস প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, গত সাত মাসের মধ্যে মাত্র দুই মাসে দাম বেড়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে বাড়ির দাম ০.৩ শতাংশ কমেছে, যা বাজারে ক্রেতা আস্থার ঘাটতির প্রমাণ।
বর্তমানে গড় বাড়ির মূল্য দাঁড়িয়েছে £২৯৬,৬৬৫, যা আগের বছরের তুলনায় ২.৫ শতাংশ বেশি। তবে এই বৃদ্ধি মে মাসের তুলনায় ধীর। হ্যালিফ্যাক্সের মর্টগেজ প্রধান আমান্ডা ব্রাইডেন জানান, মর্টগেজ গ্রহীতাদের অনেকেই উচ্চ সুদের কারণে চাপে রয়েছেন, বিশেষ করে যাদের নির্দিষ্ট হারে ঋণের মেয়াদ শেষের পথে। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতির হার লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকায় এবং শ্রমবাজারে দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় বাজারে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে যুক্তরাজ্যের বেকারত্ব বেড়ে ৪.৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময়ের মধ্যে পে-রোলে থাকা কর্মীর সংখ্যা কমেছে ৫৫,০০০ জন। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারের £২৫ বিলিয়ন ন্যাশনাল ইনশিওরেন্স কর বৃদ্ধির ফলে চাকরি ও বেতনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ন্যাশনওয়াইডের আলাদা এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুনে গড় বাড়ির দাম ০.৮ শতাংশ কমে £২৭১,৬১৯ হয়েছে, যা বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসকৃত ০.১ শতাংশ বৃদ্ধির ঠিক উল্টো। এটি গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে বড় মাসিক পতন।
তবে এই স্থবিরতা সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে হাউসবিল্ডিং কোম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্য খানিকটা বেড়েছে। FTSE 100 ও FTSE 250 সূচকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর গড় শেয়ার মূল্য ০.৩ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে ভিস্ট্রি ১ শতাংশ বাড়তি লাভ করেছে। পার্সিমন ছিল সবচেয়ে দুর্বল, যার শেয়ার মূল্য ০.৩ শতাংশ কমেছে।
হ্যালিফ্যাক্সের তথ্যে দেখা যায়, উত্তর আয়ারল্যান্ডে বাড়ির দামের বার্ষিক বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি—৯.৬ শতাংশ, যেখানে গড় মূল্য এখন £২১২,১৮৯। স্কটল্যান্ডে এই হার ৪.৯ শতাংশ (£২১৪,৮৯১) এবং ওয়েলসে ৩.৯ শতাংশ (£২২৯,৬২২)। ইংল্যান্ডের মধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধিতে। অপরদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং লন্ডনে দামের বৃদ্ধি খুবই সীমিত—শুধু ০.৫ ও ০.৬ শতাংশ।
তবে দামের দিক থেকে লন্ডন এখনও দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অঞ্চল, যেখানে একটি গড় বাড়ির মূল্য £৫৪০,০৪৮। প্রপার্টিমার্কের প্রধান নির্বাহী নাথান এমারসন বলেন, “আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকট ও স্ট্যাম্প ডিউটির পরিবর্তনের কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “তবে সরকার আবাসন সরবরাহ বাড়াতে এবং বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে।”
চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যের আবাসন বাজার এখনও চাপে রয়েছে, যেখানে শ্রমবাজারের দুর্বলতা এবং সুদের উচ্চ হার ক্রয়ক্ষমতায় বড় ধাক্কা দিচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে
০৮ জুলাই ২০২৫