TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ১০ বছর আগে স্বামীর হাতে খুন হওয়া স্ত্রী’র লাশ খুঁজে পেল পুলিশ

যুক্তরাজ্য পুলিশ দশ বছরেরও বেশি সময় আগে নিহত হওয়া এক মায়ের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে বলে দাবি করেছে। পুলিশ প্রশাসন এ-নাইন্টিন মহাসড়কের কাছে তল্লাশি চালাচ্ছিল বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়।

২৫ বছর বয়সী রানিয়া আলায়েদকে ২০১৩ সালের জুন মাসে গ্রেটার ম্যানচেস্টারের সালফোর্ডে তার স্বামীর ভাইয়ের ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী ছিল আহমেদ আল-খাতিব।

আল-খাতিবকে ২০১৪ সালের জুনে ২০ বছরের ন্যূনতম কারাদণ্ডসহ আজীবনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়।

ধারণা করা হচ্ছিল যে, রানিয়ার দেহাবশেষ উত্তর ইয়র্কশায়ারের থির্সকের কাছে এ-১৯ মহাসড়কের পাশের একটি ছোট জঙ্গলে পুঁতে রাখা হয়েছে, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পুলিশ নতুন তথ্যের ভিত্তিতে এ-১৯ মহাসড়কের পাশে আবারও তল্লাশি শুরু করলে দেহাবশেষ উদ্ধার হয়, যা তারা রানিয়ার বলে মনে করছে।

গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশের (জিএমপি) একজন মুখপাত্র বলেছেন, “যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এটি রানিয়ার দেহাবশেষ।

তার পরিবারকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে এবং বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারা তাদের সহায়তা করছেন।”

রানিয়ার ছেলে ইয়াজান, পরিবারের পক্ষ থেকে বলেন, “আমার মায়ের দেহাবশেষ প্রায় এক দশক পর খুঁজে পাওয়া আমাদের জন্য এক অদ্ভুত চমক। শেষ পর্যন্ত তাকে যথাযথভাবে দাফন করার সুযোগ পাওয়াটাই গত ১১ বছর ধরে আমাদের একমাত্র চাওয়া ছিল।

আমার মায়ের জন্য কবরে কয়েকটি ফুল রেখে আসতে পারা এই জীবনে আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”

পুলিশ জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ দল আরও কাজ চালিয়ে যাবে এবং এলাকাটি কিছুদিন পুলিশের নজরদারিতে থাকবে।

গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান নিল হিগিনসন বলেন, “রানিয়ার হত্যাকাণ্ডের এক দশকেরও বেশি সময় পর, আমরা এখন বিশ্বাস করি যে আমরা অবশেষে রানিয়ার দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছি এবং তার পরিবারের জন্য কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিতে পারব, যারা দীর্ঘদিন ধরে দুঃখ ও কষ্ট সহ্য করে আসছেন।

তার হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত ভয়াবহ ছিল, এবং তার দেহাবশেষ কোথায় আছে তা জানা না যাওয়ায় তার পরিবার আরও কষ্ট পেয়েছে।”

২৫ বছর বয়সী রানিয়াকে তার স্বামী আল-খাতিব হত্যা করেছিল, কারণ সে মনে করত রানিয়া “অতিরিক্ত আধুনিক হয়ে উঠেছে”।

বিয়ের দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি পেতে রানিয়া আইনজীবীদের সাহায্য চেয়েছিলেন এবং পরে তিনি কলেজে ভর্তি হয়ে নতুন বন্ধু তৈরি করেন, এমনকি ইন্টারনেটে একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

কিন্তু ২০১৩ সালের জুন মাসে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান এবং তার দেহাবশেষ কখনো পাওয়া যায়নি।

আল-খাতিবকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে সে কখনো প্রকাশ করেনি কোথায় রানিয়ার দেহ সে লুকিয়েছিল।

তবে সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এ-১৯ মহাসড়কের পাশে খননকাজ শুরু করে। পুলিশ ও তদন্তকারী কুকুরের সাহায্যে মহাসড়কের পাশের একটি বাঁধে দেহাবশেষের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, “নতুন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা রানিয়া আলায়েদের দেহাবশেষ উদ্ধারে তল্লাশি চালাচ্ছি।স্থানীয়দের অসুবিধা যেন না হয় সেদিকে নজর রেখে কাজ করা হচ্ছে।”

আল-খাতিবের ভাই মুহানেদ এবং হুসাইন, রানিয়ার দেহ গোপন করতে সাহায্য করেছিল এবং এজন্য তাদেরও কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারা দাবি করেছিল যে, রানিয়ার দেহ এ-১৯ মহাসড়কের কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা সঠিক অবস্থান বলেনি।

আল-খাতিব তার স্ত্রীর মৃত্যুকে ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে তার পোশাক পরে সিসিটিভির সামনে দিয়ে হেঁটে যায়, যেন সে তখনও জীবিত আছে।

পরে তারা একটি ক্যাম্পারভ্যানে করে তার লাশ ৮৭ মাইল দূরে উত্তর ইয়র্কশায়ারে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়।

রানিয়ার বন্ধুরা যখন তার ফোন ও বার্তার উত্তর না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়, তখন পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং জুলাই ২০১৩-তে আল-খাতিবকে গ্রেফতার করে।

আল-খাতিব প্রথমে স্বীকার করে যে, সে রাগের মাথায় রানিয়াকে ধাক্কা দিয়েছিল, কারণ সে বিশ্বাস করত রানিয়া “জিনে আক্রান্ত” ছিল।

বিচারক মিস্টার জাস্টিস লেগাট রায় ঘোষণার সময় বলেন, “আল-খাতিব জীবিত রানিয়াকে অবজ্ঞা করেছিলে, মৃত্যুর পরও তার প্রতি একই অবজ্ঞা ছিল তার। সারা বিশ্বে, বিশেষত নারীদের লক্ষ্য করে, প্রতিবছর হাজার হাজার “অনার কিলিং” সংঘটিত হয়।

এই হত্যাকাণ্ডগুলি সাধারণত পরিবারের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়, যাতে তারা মনে করে পারিবারিক বা সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হবে।

এর পেছনে বিভিন্ন কারণ দেখানো হয়, যেমন: জোরপূর্বক বিয়ে প্রত্যাখ্যান করা, অপছন্দের কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, ধর্ম ত্যাগ করা বা তথাকথিত অনুপযুক্ত আচরণ বা পোশাক পরা।”

ইউকে-ভিত্তিক অনার বেইসড ভায়োলেন্স অ্যাওয়ারনেস নেটওয়ার্ক (HBVAN) অনুসারে, যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ১২টি অনার কিলিং হয়।

বিশ্বব্যাপী এই সংখ্যা প্রায় ৫,০০০ বলে অনুমান করা হয়।

ধর্মীয় নেতারা বারবার ঘোষণা করেছেন যে, কোনো প্রধান ধর্মগ্রন্থ অনার কিলিংকে সমর্থন করে না, এবং এটি সর্বত্র নিন্দিত।

পুলিশ রানিয়ার দেহ খুঁজে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এবং তারা বলেছে যে তারা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার দেহাবশেষ খুঁজতে থাকবে, যাতে তার একটি সম্মানজনক দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।

একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আশা করি, এখন আমরা রানিয়াকে অবশেষে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব, যেখানে তার প্রকৃত স্থান।”

সূত্রঃ দ্য সান

এম.কে
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

পদত্যাগ করছেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসুফ

যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন রিমুভাল সেন্টারে:আকষ্মিক হামলার ঘটনা

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বাজেটে ঘাটতির রেকর্ড