যুক্তরাজ্যের হোম অফিস কর্তৃক একজন এনএইচএস কনসালট্যান্টের কিশোর ছেলের ভিসা দেওয়া হয় নাই।এর কারণে এনএইচএস কনসালট্যান্ট ইউকের চাকুরী ছেড়ে দেশে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
এনএইচএসের এই বিশেষজ্ঞ কর্মীর একমাত্র পুত্র যুক্তরাজ্যে আসতে না পারার কারণে ভারতের এই বিশেষজ্ঞ কর্মী অশান্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, তিনি একজন সিঙ্গেল মা এবং নিজে কেয়ার ভিসায় গত মাসে উত্তর ইংল্যান্ডের একটি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন তার ১৫ বছর বয়সী সন্তান ডিপেনডেন্ট হিসাবে তার সাথে যোগ দেবে।
এবং এই পদক্ষেপের অনুমোদনের কথা চিন্তা করে তার প্রাক্তন স্বামীর নিকট থেকে একটি হলফনামাসহ বেশ কয়েকটি নথি জমা দেওয়া হয় আবেদনের সাথে। কিন্তু হোম অফিস কর্মকর্তারা দুটি কারণ দেখিয়ে আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেন।
প্রথমত, পিতা ছেলের সাথে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য আবেদন করেননি।
দ্বিতীয়ত, মায়ের সন্তানের দেখাশোনা করার একক অধিকার আছে কিংবা একমাত্র দায়িত্ব প্রাপ্ত তা প্রমাণ করা হয় নাই।
হোম অফিস তাদের তৈরি ভিসা প্রত্যাখ্যান নথিতে যুক্ত করে, ” একমাত্র দায়িত্ব বলতে হেফাজতের মতো নয়।” যার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে ” সন্তানকে মায়ের হেফাজত দেওয়া হয়েছে, তখন পিতাকে সন্তানকে দেখার অধিকার দেওয়া হয়। এইভাবে ইঙ্গিত করা হয় যে সন্তান যে অপ্রাপ্তবয়স্ক তারজন্য মা-বাবা উভয়ের কিছু দায়িত্ব রয়েছে।”
কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে পিতা একটি হলফনামায় তার দেখা করার অধিকারকে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তবে তারা বলেন হলফনামাটি কত তারিখে প্রদান করা হয়েছে সেটি পরিষ্কার নয়।
হোম অফিস আরও জানিয়েছে যে ” হলফনামা তথ্যের উৎস হতে পারে, তবে যুক্তরাজ্যে শিশু হেফাজতের বিষয়ে আইনী ডকুমেন্টেশন হিসাবে হলফনামাকে বিবেচনা করা হয় না”।
যুক্তরাজ্যে এনএইচএসে চাকুরীরত মা তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি এছাড়া আর কি কাগজাদি জমা দিয়ে আমার ছেলের দায়িত্ব নিতে হবে জানি না। আমার ডিভোর্স হবার পর হতে আমি আমার ছেলেকে লালনপালন করি। আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছে। সে ছেলের কোনো দায়িত্ব পালন করে নাই। আমি ছাড়া আরো অন্য মানুষের ভিসা আবেদনে দেখেছি তারা সহজেই ডিপেন্ডেন্ট সন্তানদের তাদের সাথে নিয়ে ইউকে যেতে পেরেছে। তবে আমার ক্ষেত্রে এই পরিনতি কেন?
এনএইচএস কর্মীর প্রতিনিধিত্বকারী ট্রেন্ট চেম্বারের ব্যারিস্টার উসা সুদ বলেন, “ হোম অফিসে সিঙ্গেল মায়ের জন্য দায়িত্ব প্রমাণ করার জন্য নথি আহ্বান অযৌক্তিক স্তরের বলে মনে হয়। এই ব্যাপারটি শিশু কল্যাণের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। “
ম্যানচেস্টারের সিনিয়র এডভাইজার মনোচিকিৎসক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফিজিশিয়ানস (বাপিও) এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান জে এস বামরাহ বলেন, “ হোম অফিসের কিছু সিদ্ধান্ত পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। হোম অফিস তাদের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত দিয়ে শিশুটিকে তার মা থেকে আলাদা করেছে। তারা কেন এটি করছে তা অকল্পনীয়।”
হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, ” হোম অফিস সমস্ত ভিসা অ্যাপ্লিকেশনগুলি ইমিগ্রেশন বিধি অনুসারে সাবধানতার সাথে বিবেচনা করে থাকে।”
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্রায় এক লাখ এনএইচএস কর্মীদের জন্য শূন্য পদ রয়েছে। তাছাড়া রুটিন চিকিৎসার জন্য অপেক্ষমান তালিকা প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন লোক। বিদেশী চিকিৎসকরা এনএইচএস জুড়ে বিভিন্ন পদের একটি উচ্চ অনুপাত সংখ্যা পূরণ করে থাকে। বর্তমানে বিদেশী কর্মীরা তাদের প্রিয়জনের জন্য নির্ভরশীল ভিসা প্রাপ্তিকে ক্রমশ কঠিন হচ্ছে বলে মনে করন।
সূত্রঃ স্কাই নিউজ
এম.কে
১৪ অক্টোবর ২০২৪