যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের (NEU) নেতা রিফর্ম ইউকে দলের মূল কান্ডারি নাইজেল ফারাজকে ‘সস্তার ডোনাল্ড ট্রাম্প’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই ঘোষণা তখনই আসল যখন নাইজেল ফারাজ ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করার কথা বলেন।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় শিক্ষক ইউনিয়ন রিফর্ম ইউকে-কে “চরম-ডানপন্থী ও বর্ণবাদী” দল বলে অভিহিত করেছে এবং নির্বাচনে রিফর্ম দলের প্রার্থীদের বিরোধিতার জন্য তহবিল ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনে প্রতিনিধিরা একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেন, যাতে বলা হয়: “চরম-ডানপন্থী ও বর্ণবাদী সংগঠনগুলো আমাদের সমাজের হতাশা, দারিদ্র্য এবং বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী, মুসলিম, ইহুদি ও তাদের মতের সঙ্গে যাদের মিলেছে না এমন অন্যদের লক্ষ্যবস্তু করছে।”
প্রস্তাবে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়ন তার রাজনৈতিক তহবিল রিফর্ম দলের প্রার্থীদের বিরোধিতায় এবং স্থানীয় ইউনিয়ন শাখাগুলোর কার্যক্রমে সমর্থনে ব্যবহার করবে।
প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য রাখা প্রতিনিধিরা বলেন, রিফর্ম ইউকে-র কিছু প্রার্থী এবং কর্মী আগে ফ্যাসিস্ট সংগঠনের সদস্য ছিলেন বা তাদের মতবাদ সমর্থন করেছেন।
নটিংহামের প্রতিনিধি ক্যাথরিন নোরুজি বলেন,
“ আমাদের স্পষ্টভাবে বলতে হবে রিফর্ম পার্টি দলটি আসলে কী – এটি একটি বর্ণবাদী দল – এবং আমাদের এর বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হবে। এদের নীতিগুলো ভয় ও বিভাজন সৃষ্টি করতে বানানো হয়েছে।
একটি ইউনিয়ন হিসেবে আমাদের স্পষ্টতা ও সাহস থাকতে হবে এই দলটির বিরোধিতা করার। আমাদের রাজনৈতিক তহবিল – যা মূলত এমন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যবহারের জন্যই তৈরি –যা ব্যবহার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের মহাসচিব ড্যানিয়েল কেবেডে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিশ্চিত রিফর্ম দাবি করবে তারা বর্ণবাদী নয়। কিন্তু তারা যে বিপুল সংখ্যক সাবেক বিএনপি(ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টি)-এর কর্মী আকর্ষণ করছে, সেটা এই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আমি মূলত উদ্বিগ্ন, রিফর্ম পার্টি যদি কখনও সরকার গঠন করে তবে শিক্ষাক্ষেত্রে কী করবে।”
ডারহামে একটি প্রচারণা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের প্রস্তাব নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, ফারাজ বলেন, কেবেডে একজন আত্মঘোষিত মার্ক্সবাদী আখ্যা। যিনি চান আমাদের সন্তানদের স্কুলে বিষাক্ত চিন্তা দেওয়া হোক, যেন তারা দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পায়।
ফারাজ বলেন, কেবেডে স্কুলে শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন রিফর্ম একটি বর্ণবাদী দল, যা কিশোরদের ‘প্ররোচিত’ করছে। তিনি বলেন, “যদি আমরা ২০২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে জিতি, তাহলে আমরা ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়ন ও অন্যান্য বামপন্থী শিক্ষক ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে যাব।”
এ বিষয়ে কেবেডে বলেন, ফারাজের মন্তব্য “ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশল থেকে সরাসরি নেওয়া”।
তিনি বলেন, “এলন মাস্ক ও ট্রাম্প উভয়ই মার্কিন শিক্ষক ইউনিয়নগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ করছেন। ফারাজও ঠিক সেটাই করছেন – তিনি একজন সস্তার ডোনাল্ড ট্রাম্প।”
জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি ফারাজকে বর্ণবাদী মনে করেন কিনা, কেবেডে বলেন, “আমি মনে করি নাইজেল ফারাজ একজন ডানপন্থী লোক।”
এক নির্বাচনী ভাষণে ফারাজ খোলাখুলি লেবার পার্টিকে আক্রমণ করেন এবং ট্রাম্পের মতো রেটোরিক ব্যবহার করলেও নীতিগত দিক থেকে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, “রিফর্ম এখন ‘রেড ওয়াল’-এর উঠোনে ট্যাংক নামিয়ে দিয়েছে। এটা আজ প্রথম বলছি, কিন্তু আমি সত্যিই তা বিশ্বাস করি – আমরা এখানে আছি, এবং আমরা এখানেই থাকবো।”
ট্রাম্পের মতোই ফারাজ তার বক্তব্যে “সংস্কৃতি যুদ্ধ” সম্পর্কিত মন্তব্য ছড়ান, যেমন নিয়োগ নীতির সমালোচনা করেন যা ‘শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে সংখ্যালঘুদের অগ্রাধিকার দেয়’ বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “পুলিশ ও NHS-এর নিয়োগ নীতিতে এমন ব্যবস্থা দেখা যায় যা দীর্ঘদিন ধরে এই দেশে থাকা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় সংখ্যালঘুদের এগিয়ে রাখে। এটি একটি লজ্জাজনক অবস্থা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা DEI (diversity, equity, inclusion) এবং এই ধরনের পাগলামির কোনো পক্ষপাতী নই। এগুলো উত্তর লন্ডনের মানবাধিকার আইনজীবীদের বিচ্ছিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অংশ।”
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে আসছে এমন জরিপ উপেক্ষা করে, ফারাজ “ব্রিটিশ ডোজ” নামে এলন মাস্কের প্রস্তাবিত সরকারি দক্ষতা সংস্থা চালুর প্রতিশ্রুতি দেন।
তার বক্তব্য ও সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে ফারাজ অর্থনীতিতে সংস্কার, জাতীয় বীমা কর বাতিল, কৃষি সম্পত্তির উত্তরাধিকার কর পরিবর্তন, এবং গরমকালে জ্বালানি ভাতা পুনর্বিবেচনা ইত্যাদি বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলেননি।
তিনি শুধু বলেন, “যুক্তরাজ্যের পুনরুদ্ভবের” মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যে হাজার হাজার ভালো বেতনের চাকরি তৈরি হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
ব্রিটিশ স্টিল রাষ্ট্রায়ত্ত করার পক্ষে থাকা ফারাজ বলেন, রিফর্ম সরকার ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে – তবে শিক্ষক ইউনিয়নের ক্ষেত্রে সেটা হবে না।
NEU-এর বার্ষিক সম্মেলনে, শিক্ষক বেতন ২.৮% বাড়ানোর সরকারি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে ধর্মঘটের অনুমোদনের জন্য ভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কেবেডে বলেন, “আমরা অন্যান্য ইউনিয়নের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করি – শুধু শিক্ষায় নয়, স্বাস্থ্য খাতেও ২.৮% বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে।”
এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর, শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজেট ফিলিপসন বলেন, “স্কুল উপস্থিতি বাড়াতে যখন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করছে, তখন ধর্মঘটের দিকে যাওয়া অনর্থক।”
তিনি আরও বলেন, “চরম আর্থিক চাপের মধ্যেও ৫.৫% বেতন বৃদ্ধির পর, আমি ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়ন-কে অনুরোধ করব যেন তারা শিশুদের অগ্রাধিকার দেয়।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ এপ্রিল ২০২৫