যুক্তরাজ্য সরকারের নেয়া আশ্রয়প্রার্থীদের আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানো সংক্রান্ত বিলটিতে কিছু সংশোধনী এনে সংসদের নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠিয়েছে উচ্চকক্ষ৷ চলতি মাসেই এটি নিয়ে আবার আলোচনা হবে নিম্নকক্ষে৷ ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়৷
ফ্রান্সের উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যমুখী নৌকা থামানোকে নিজের পাঁচ অগ্রাধিকারের অন্যতম হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷ তারই অংশ হিসাবে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তার প্রশাসন৷ কিন্তু সুনাকের এই ‘বিতর্কিত পরিকল্পনা’ অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অফ লর্ডসে ১০ ভোটে হেরেছে৷
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আগামী ১৮ মার্চ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে এই ইস্যুতে আলোচনা করে পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের ভোট দেবেন৷ এরপর সেটি আবার পাঠানো হবে উচ্চকক্ষে৷
দুই কক্ষের এমন টানা-হ্যাঁচড়া যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্টারি ‘পিং-পং’ নামে পরিচিত৷ এই বছরই ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন৷ জনমত জরিপে এগিয়ে আছে বিরোধী লেবার পার্টি৷ তাই সাধারণ নির্বাচনের আগে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে ভোটের মাঠের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে চান সুনাক৷
এদিকে, ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা এ বছরও বেড়েই চলেছে৷ বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এ বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত তিন হাজার ২০৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন৷
২০২২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্যের প্রতি নিরুৎসাহিত করতে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর প্রস্তাবটি সামনে আনেন৷ এরপর সেটিকে এগিয়ে নিতে চান তার উত্তরসুরী ঋষি সুনাকও৷ কিন্তু এই পরিকল্পনাটি বিতর্ক এবং আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যায়, খারিজ হয়ে যায় যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতেও৷ ফলে এখন পর্যন্ত কোনো অভিবাসীকে রুয়ান্ডায় পাঠানো সম্ভব হয়নি৷
সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পরও রুয়ান্ডা পরিকল্পনা থেকে সরে আসেননি ঋষি সুনাক৷ বরং রুয়ান্ডাকে নিরাপদ তৃতীয় দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নতুন একটি বিল পার্লামেন্টে নিয়ে আসা হয়৷ সংসদের নিম্নকক্ষ সেটির অনুমোদন দিলেও আটকে গেছে উচ্চকক্ষে৷
হাউস অব লর্ডস বা উচ্চকক্ষ থেকে দেয়া সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে, রুয়ান্ডায় নিরাপত্তার বিষয়ে দেশীয় আদালতের সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণকে সরকারের মেনে নিতে হবে৷ এতে আরো বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট রুয়ান্ডাকে নিরাপদ দেশ বলে ঘোষণা করতে পারে না৷ নিরাপদ দেশ হিসাবে ঘোষণা করতে হলে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য প্রতিশ্রুত সুরক্ষা নিয়ে রুয়ান্ডার সঙ্গে একটি পৃথক চুক্তি করতে হবে৷
এসব সংশোধনী সুনাকের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ নির্বাচনের আগেই রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তরের কাজ শুরু করতে চান তিনি৷ অন্তত একটি বিমান হলেও পাঠাতে চান রুয়ান্ডার কিগালিতে৷ একইসঙ্গে মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশন থেকে বেরিয়ে আসতেও নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের চাপের মুখে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷
ন্যাশনাল অডিট অফিস জানিয়েছে, রুয়ান্ডায় প্রথম তিনশ আশ্রয়প্রার্থী পাঠাতে ব্রিটিশ করদাতাদের গুণতে হবে ৫০ কোটি পাউন্ডের বেশি অর্থ৷
সূত্রঃ এএফপি
এম.কে
১০ মার্চ ২০২৪