8.5 C
London
February 5, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

রূপপুর প্রকল্পে আত্মসাতের অর্থে লন্ডনে বাড়ি কিনেছেন টিউলিপ, দুদকের বরাতে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যের সাবেক নগর ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তার মা ও খালার যোগসাজশে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে তহবিল তছরুপ করে সেই অর্থ দিয়ে লন্ডনে বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মা শেখ রেহানা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা রুশ অর্থায়নে নির্মিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। সেই আত্মসাৎ করা অর্থের একটি অংশ ৭ লাখ পাউন্ড ব্যবহার করে টিউলিপ লন্ডনে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত শেষে জানান, টিউলিপ সিদ্দিক অনিচ্ছাকৃতভাবে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এরপর তিনি ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ট্রেজারি মন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্বের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে কয়েক সপ্তাহজুড়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্নের পর তিনি নিজেই বিষয়গুলো তদন্তের জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, লন্ডনে তিনি যেসব বাড়ি বা ফ্ল্যাট এবং অন্যান্য সম্পত্তি ব্যবহার করেন, সেগুলো বাংলাদেশে তার খালা হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ৭৭ বছর বয়সী হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার এবং গোপনে আটক রাখার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, তার সরকারের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার লুটপাট করেছেন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা ও তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিরুদ্ধে রুশ অর্থায়নে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে।

তদন্তের সর্বশেষ আপডেটে দুদক জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তারা জানতে পেরেছে, লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট টিউলিপ সিদ্দিক পেয়েছেন। দুদকের অনুমান, এটি বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করা অর্থে কেনা হতে পারে।

তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, এই অবৈধ অর্থ মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে লন্ডনে হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের জন্য উচ্চমূল্যের সম্পত্তি কেনার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘গোপন অনুসন্ধানে এসব অভিযোগ সত্য বলে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা প্রকাশ্য তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে যে, তিনি বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচার ও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’ সূত্রটি আরও বলেছে, ‘অফশোর ব্যাংক হিসাব ও সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রেও টিউলিপের নাম উঠে এসেছে, যা অবৈধ অর্থের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’

দুদক জানিয়েছে, শুধু টিউলিপ সিদ্দিকই নন, তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও লন্ডনে বিভিন্ন বাড়ি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন, যার মধ্যে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট এবং উত্তর লন্ডনে ১৫ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড মূল্যের একটি বাড়ি উল্লেখযোগ্য।

তদন্তকারীদের দাবি, এসব লেনদেন আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং চক্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ এখন এই সম্পদের প্রকৃত অর্থের উৎস তদন্ত করছে। তবে এটি এখনো স্পষ্ট নয় যে, এগুলো সেই একই সম্পত্তি কিনা, যা যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের নৈতিকতা উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করেছিলেন।

লেবার পার্টির সূত্র জানিয়েছে, ২০০৪ সালে এক ব্যবসায়ী টিউলিপ সিদ্দিককে যে ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন, সেটির বর্তমান মূল্য ৭ লাখ পাউন্ড। কিন্তু এটি রূপপুর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না, কারণ রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালে।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবে দুদক জানিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং টিউলিপসহ তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা সরকারি তহবিলের অপব্যবহার থেকে লাভবান হয়েছেন।

এর আগে, ২০১৩ সালে মস্কোতে এক বৈঠকে হাসিনার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছিল টিউলিপকে। ওই বৈঠকেই রাশিয়া বাংলাদেশে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়।

দুদক অভিযোগ করেছে, ‘টিউলিপ সিদ্দিক এই চুক্তি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন এবং তার পরিবার প্রকল্প থেকে £৩.৯ বিলিয়ন আত্মসাৎ করেছে।’ দুদক আরও জানিয়েছে, তারা অন্যান্য বড় অবকাঠামো প্রকল্পেও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে, যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশি ব্যাংক হিসাবে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিককে এই বিষয়ে এখনো কোনো নোটিশ পাঠানো হয়নি এবং তিনি এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।’

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে পরিণত হলো লন্ডনের মসজিদ

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

বেনিফিট কমে যাওয়ায় ফুড ব্যাংকের দ্বারস্থ ৮ সন্তানের জননী

অনলাইন ডেস্ক