ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নীতিনির্ধারকরা যুক্তরাজ্যে বিদ্যমান সুদহার বজায় রেখেছেন। তবে চলতি বছরে কমপক্ষে তিন দফা সুদহার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। শর্ত হিসেবে বলা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কমার ‘উৎসাহজনক লক্ষণ’ দেখার সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সাম্প্রতিক এক বৈঠকে ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক পঞ্চমবারের মতো সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে ধরে রেখেছে। অনেক দিন ধরে দেশটিতে সুদহার কমানোর বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও বৈঠকে সে প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি।
দেশটির আর্থিক খাতগুলো চলতি বছরে দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্টের তিন দফা সুদহার কমানোর আশা করছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বছরের মাঝামাঝি জুনে প্রথম ঘোষণাটি আসতে পারে।
আর্থিক সংস্থাগুলোর ওপর পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার আগে সুদহার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে যাওয়ার আশা করছে তারা।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইংল্যান্ডে মূল্যস্ফীতি তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ভোক্তা মূল্যসূচক ৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। মূল্যস্ফীতি এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের ওপরেই। তবে ২০২২ সালের অক্টোবরে ১১ দশমিক ১ শতাংশের তুলনায় সবচেয়ে নিচে।
বৈঠকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের রেট-সেটিং মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) আট সদস্য সুদহার ধরে রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে কমিটির এক্সটার্নাল সদস্য স্বাতী ধিংরা দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে আনার প্রস্তাবে সমর্থন করেছেন। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর এবারই প্রথম এমপিসির কেউ সুদহার বাড়ানোর পক্ষে ভোট দেননি।
সুদহার ধরে রাখার বিষয়ে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় মূল্যস্ফীতি আরো কমার উৎসাহজনক লক্ষণ দেখেছি আমরা। সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ধরে রেখেছি। কারণ কমানোর আগে নিশ্চিত হতে হবে যে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য অনুযায়ী ২ শতাংশে নেমে আসবে।’
কিছুটা আশাবাদী সুর বজায় রেখে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখনো সুদহার কমানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই। তবে সবকিছু ঠিক পথেই এগোচ্ছে।’
ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গরমের মৌসুমের মাঝেই মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের সামান্য নিচে নেমে আসবে। সঙ্গে সতর্কও করে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ও বিশ্বের ব্যস্ততম সমুদ্রপথগুলো একটি লোহিত সাগরে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঝুঁকি”হয়ে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতিতে এশিয়া থেকে ইউরোপে চালান পৌঁছতে দু-তিন সপ্তাহ দেরি হচ্ছে এবং কনটেইনার খরচ বেড়েছে।
উচ্চ সুদহার ছাড়াও মন্দার কারণে সম্প্রতি আলোচনায় আসে যুক্তরাজ্য। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে দশমিক ৩ শতাংশের বেশি। এর আগে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে বৈঠকের পর এমপিসি জানায়, তারা আশা করছে দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ প্রবৃদ্ধি সাধারণত দামের ওপর চাপ বাড়াবে, কিন্তু জ্বালানি ও খাদ্যের দামে সাম্প্রতিক পতনের পাশাপাশি সরকারের জ্বালানি শুল্ক নীতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশের নিচে ঠেলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার আগের অংকে স্থির রাখার কয়েক দিনের মধ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সর্বশেষ বৈঠকে সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে চলতি বছর সুদহার তিন দফা কমতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন ফেড কর্মকর্তারা।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এখনো ২০২৪ সালে সুদহার কমানোর পক্ষে আশাবাদী। এজন্য যুক্তরাজ্যের মতোই মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৪ মার্চ ২০২৪