গাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেলেও সন্তানদের সঙ্গে আনতে না পারায় পড়াশোনার সুযোগ হারাচ্ছেন। এই মানবিক সংকট তুলে ধরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের শতাধিক এমপি সরকারের কাছে চিঠি লিখেছেন।
সরকার এখন পর্যন্ত গাজা থেকে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থীকে সরিয়ে এনেছে, যাদের সকলেরই যুক্তরাজ্যে পূর্ণ বৃত্তি ছিল। তবে আরও অনেক শিক্ষার্থী পরিবারকে সঙ্গে আনতে না পারায় তাদের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
২৬ বছর বয়সী লোয়াই তার মধ্যে একজন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট হিলডাস কলেজে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও মূল্যায়ন বিষয়ে এমএসসি করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী হালা ও তিন মাস বয়সী কন্যা রসিলকে গাজায় ফেলে যেতে না পেরে থেকে গেছেন।
লোয়াই বলেন, “আমার স্ত্রী ও মেয়ে আমার পুরো পৃথিবী। আমি পালিয়ে বাঁচতে পারতাম, কিন্তু তাদের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফেলে রেখে সেই জীবনকে আমি বাঁচা বলতে পারি না। নিরাপত্তা পেতে চাইনি পরিবারের বিনিময়ে।” এখন তিনি দিন কাটাচ্ছেন শিশুর দুধের ফর্মুলা খুঁজে বেড়িয়ে।
৩১ বছর বয়সী ফাতিন, দুই সন্তানের মা, সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ে এমএ পড়ার বৃত্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু সন্তানদের সঙ্গে যেতে না পারায় তিনিও গাজায় থেকে গেছেন। তিনি বলেন, “প্রথম সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ স্থগিত করার পর নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু মনে হয় যেন আবারও জীবনের দরজা নিজ হাতে বন্ধ করছি। যদি এবারও সন্তানদের নিয়ে যেতে না পারি?”
চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেছেন সব দলের সংসদ সদস্য ও হাউস অব লর্ডস সদস্যরা—তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কনজারভেটিভ শিক্ষা সচিব কেনেথ বেকার, লেবার পার্টির অভিজ্ঞ সদস্য ও সাবেক শিশু শরণার্থী লর্ড আলফ ডাবস, সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন এবং গ্রিন পার্টির সাবেক নেতা কার্লা ডেনিয়র।
চিঠির সমন্বয়ক ও লেবার এমপি আবতিসাম মোহাম্মদ বলেন, “ব্রিটেন সবসময় সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে আগত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছে। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখন শিক্ষার্থীরা এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি যেখানে তাদের হয় পরিবারকে ত্যাগ করতে হচ্ছে, নয়তো শিক্ষার স্বপ্ন ছাড়তে হচ্ছে। আমরা প্রশাসনিক বাধাকে মানবিকতার পথে দাঁড়াতে দিতে পারি না।”
বর্তমান অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সাধারণত নির্ভরশীল সদস্য (সন্তান বা জীবনসঙ্গী) সঙ্গে আনার অনুমতি নেই। তবে মানবাধিকার কর্মীদের মতে, গাজার পরিস্থিতি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. নোরা পার, যিনি গাজার শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছেন, জানান—এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ৫৮ জন শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র এক দম্পতির সন্তানকেই আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী বাবা-মা, যারা পরিবার ছাড়া গাজা ছাড়তে পারছেন না। এই সময়টা স্বাভাবিক নয়—তাদের শিক্ষার সুযোগ বজায় রাখতে বিশেষ মন্ত্রিপরিষদীয় অনুমোদন প্রয়োজন।”
সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা গাজার শিক্ষার্থীদের সহায়তায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আনা হয়েছে, আরও আসার প্রস্তুতি চলছে। তবে গাজা থেকে মানুষ সরিয়ে আনা একটি অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল প্রক্রিয়া।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৪ অক্টোবর ২০২৫