“সিলিকন সিক্স” নামে পরিচিত বড় মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, গত এক দশকে তারা কর্পোরেট আয়কর বাবদ প্রায় ২৭৮ বিলিয়ন ডলার কর কম পরিশোধ করেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অ্যামাজন, মেটা, অ্যালফাবেট, নেটফ্লিক্স, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট গড়ে ১৮.৮% কর দিয়েছে, যেখানে মার্কিন গড় করহার ২৯.৭% এমন তথ্য দিয়েছে ফেয়ার ট্যাক্স ফাউন্ডেশন (FTF)।
অ্যামাজন, মেটা, অ্যালফাবেট, নেটফ্লিক্স, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট গত দশ বছরে মোট ১১ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব এবং ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে।
ফেয়ার ট্যাক্স ফাউন্ডেশন (FTF) বলেছে, সিলিকন সিক্স কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কাঠামোতে “কর ফাঁকি প্রোগ্রামড” অবস্থায় রয়েছে।
FTF-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অতীতের কর ফাঁকির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যে এককালীন কর পরিশোধ করা হয়েছে তা বাদ দিলে, এই ছয়টি কোম্পানির গড় করহার দাঁড়ায় মাত্র ১৬.১%।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত $৮২ বিলিয়ন করের হিসাব দেখিয়েছে, যা মূলত এমন ট্যাক্স রিজার্ভ হিসেবে ছিল যা তারা আদৌ পরিশোধ করার পরিকল্পনায় ছিল না।
FTF-এর প্রধান নির্বাহী পল মনাহান বলেন, “আমাদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে কর ফাঁকি কর্পোরেট কাঠামোতেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সিলিকন সিক্স-এর কর পরিশোধের হার ব্যাংকিং বা জ্বালানি খাতের তুলনায় অনেক কম।”
তিনি বলেন, এই কোম্পানিগুলো “আক্রমণাত্মক কর কৌশল” অনুসরণ করছে, যেমন কর রিজার্ভ দেখানো, এবং তাদের রয়েছে “বিশাল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব”—তারা সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করতে লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করে লবিইং করছে।
প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন এই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রভাব আরো বেশি স্পষ্ট হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অ্যামাজনের জেফ বেজোস, অ্যাপলের টিম কুক ও মেটার মার্ক জাকারবার্গের উপস্থিতি তাদের প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দেয়।
মনাহান বলেন, সিলিকন সিক্স-এর অধিকাংশ বিদেশি আয় যুক্তরাষ্ট্রে নিম্ন হারে করের আওতায় আসে, কারণ তাদের জন্য একটি কর ছাড় রয়েছে “ফরেন-ডেরাইভড ইনট্যাঞ্জিবল ইনকাম”-এর জন্য।
এদের মধ্যে নেটফ্লিক্স সর্বনিম্ন কর পরিশোধ করেছে, মুনাফার অনুপাতে মাত্র ১৪.৭% ও মাইক্রোসফট ২০.৪% কর পরিশোধ করেছে। FTF জানিয়েছে, কর সংক্রান্ত আচরণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে অ্যামাজন—তারা যুক্তরাজ্যের আয় লুকিয়ে লুক্সেমবার্গে স্থানান্তর করার অভিযোগে অভিযুক্ত।
তবে অ্যামাজনের কর হার ছিল ১৯.৬%, যা নেটফ্লিক্স, মেটা (১৫.৪%) ও অ্যাপল (১৮.৪%) থেকে বেশি।
অ্যামাজনের একজন মুখপাত্র বলেন, “যুক্তরাজ্যে আমাদের বিক্রয়, খরচ, মুনাফা ও কর – সবই যুক্তরাজ্যে হিসাব করা হয় এবং সরাসরি HM Revenue and Customs-এ জমা দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারই কর আইন তৈরি করে এবং অ্যামাজন সেই আইন অনুযায়ী সব কর পরিশোধ করছে, পাশাপাশি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান ও অবকাঠামো গড়ে তুলছে। ২০১০ সাল থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে $১.২ ট্রিলিয়ন এবং ইউরোপে €২৫০ বিলিয়ন বিনিয়োগ করেছি। কম মুনাফার হার ও উচ্চ বিনিয়োগের কারণে আমাদের করহার স্বাভাবিকভাবেই কম হবে।”
মেটার একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় কর বিধি মেনে চলি এবং যেসব দেশে কাজ করি সেসব দেশেই কর পরিশোধ করি।”
নেটফ্লিক্সের মুখপাত্র বলেন, “সরকার করের হার নির্ধারণ করে এবং কোম্পানিগুলো তা মেনে চলে। নেটফ্লিক্স প্রতিটি দেশে প্রযোজ্য কর বিধি অনুযায়ী চলে।”
মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যাপলের মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও তারা এই বিষয়ে মতামত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৫ এপ্রিল ২০২৫