সিলেটের ওসমানীনগরে ৩ যুক্তরাজ্য প্রবাসীর মরদেহে রাসায়নিক বা বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি, এটি একটি দুর্ঘটনা। জেনারেটরের ধোঁয়া ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তাদের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিলেটের বিদায়ী পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘জেনারেটরের ধোঁয়া থেকে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে। আমরা তদন্তে দেখেছি বাসার মালিক ওই কক্ষটি এসি ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করেছেন। যে কারণে ওই কক্ষে কোনো ভেন্টিলেটর ছিল না। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘটনার দিন রাতে টানা দুই ঘণ্টা ওই বাসার ভেতরে জেনারেটর চালানো হয়। সাধারণত লোকজন জেনারেটর বাসার বাইরে চালান। কিন্তু তারা অজ্ঞতাবশত হোক আর কোনো কারণে হোক জেনারেটর বাসার ভেতর চালানোয় এর কালো ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তারা মারা গেছেন।’
তিনি বলেন, ঘটনার পর তিনি নিজে ওই বাসায় গিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে সাত মিনিট জেনারেটর চালিয়ে দেখেছেন। তিনি তখন ওই বাসায় থাকতে পারেননি। ধোঁয়ায় তার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। তাই তিনি ধারণা করছেন এটি একটি দুর্ঘটনা।
‘দীর্ঘ তদন্ত প্রক্রিয়ায় পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে এটি একটি দুর্ঘটনা। তদন্তে প্রবাসী পরিবারের স্বজন ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সঙ্গে নিহত ব্যক্তিদের জায়গা-জমি কিংবা অন্য কোনো কারণে কারও কোনো পূর্বশত্রুতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেউ বাসার ভেতরে ঢুকে তাদের কোনোভাবে হত্যা করারও সুযোগ ছিল না’, বলেন অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি ঢাকা থেকে নিহত ব্যক্তিদের ভিসেরা রিপোর্টও ওসমানী মেডিকেল কলেজে এসেছে। দু-একদিনের মধ্যে ভিসেরা রিপোর্ট মতামত দিয়ে আমাদের কাছে পাঠাবেন সংশ্লিষ্টরা। এটি এলে মৃত্যুর মূল কারণ পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
গত ১২ জুলাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন রফিকুল ইসলাম। তারা ঢাকায় এক সপ্তাহ থাকেন। পরে বড় ছেলে সাদিকুলের চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলচন্ডি নিশিকান্ত হাই স্কুল রোডে চারতলা বাসার দোতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন। তারা সংখ্যায় ছিলেন পাঁচজন।
২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল ইসলাম ঘুমিয়ে পড়েন। অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুল ইসলামদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দেন।
খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ব্রিটিশ নাগরিক রফিকুল ইসলাম (৫২) ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে (২২) মৃত ঘোষণা করেন।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, বড় ছেলে সাদিককুল ইসলাম (২৫) ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। রফিকুলের স্ত্রী হোসনে আরা ও ছেলে সাদিককুল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও দীর্ঘ ১১ দিন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে থাকা সামিরা ইসলামেরও মৃত্যু হয়।
২৪ আগস্ট ২০২২
নিউজ ডেস্ক