বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত হয়। মুসলিম নারীদের এ পোশাক পরার ব্যাপারে ইসলামে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হিজাব পরা নিয়ে বাধা-বিপত্তির অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেক নারীর। তাই হিজাব ভীতির বিরুদ্ধে সংহতি জানাতে ও হিজাবের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় বিশ্ব হিজাব দিবস।
আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস পালন শুরু হয় ২০১৩ সালে। একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নারীর আহ্বানেই এই দিবসের যাত্রা শুরু। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত ওই নারীর নাম নাজমা খান।
নাজমা খান ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাস করছেন। এখানে আসার পর থেকেই হিজাব পরা শুরু করেন তিনি। কিন্তু হিজাব পরার পর থেকে নানা ধরনের অসহিষ্ণু আচরণের মুখোমুখি হন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম হিজাব দিবস পালনের পক্ষে প্রচারণা চালান। এর ধারাবাহিকতায় পরে মুসলিম দেশগুলোতে দিবসটি পালনের প্রচলন শুরু হয়। এভাবে হিজাব দিবস বিশ্বজুড়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো এবার যুক্তরাজ্যের হোম অফিস বিশ্ব হিজাব দিবস পালন করেছে। তবে এই দিবস পালন নিয়ে যুক্তরাজ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা, সমালোচনা। হোম অফিসের অনেক কর্মচারীরা ইভেন্টের প্রচারের জন্য সমালোচনা করেন। কর্মচারীদের অনেকের মতে, মহিলাদের পোশাক পরতে বাধ্য করা এক ধরনের ‘অত্যাচার’।
হোম অফিসের কর্মীদের মতে যেখানে হিজাবের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য যুক্তরাজ্যে অনেকে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করে, সেখানে এই দিবস উদযাপন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
উল্লেখ্য যে, হোম অফিসের নির্দেশিকার মধ্যে এই কথা রয়েছে মহিলাদের যদি ধর্মীয় কোড বা পোশাকের জন্য বাধ্য করা হয় তবে এই অত্যাচারের জন্য এসাইলাম আবেদন করার ভিত্তি তৈরি হয়।
গত মাসে ইরানের কঠোর পোষাক কোড হিজাব পরতে অস্বীকার করার জন্য ইরানি মহিলা রোয়া হেশমতীকে ৭৪ টি দোররা মারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইরানের আইন অনুসারে মহিলাদের অবশ্যই তাদের ঘাড় এবং মাথা ঢেকে রাখতে হবে।
সোমালিয়ান বংশোদ্ভূত প্রাক্তন ডাচ রাজনীতিবিদ আইয়ান হিরসি আলী বলেন, ইসলামের সমালোচনার কারণে আমার সুরক্ষার প্রয়োজন। এটা সত্য যে কিছু মহিলা হিজাব পরতে পছন্দ করেন, তবে এটি সমানভাবে সত্য যে অনেকেই পছন্দ করেনও না। যারা পছন্দ করেন না তাদের জোর করে হিজাব পড়ানোর অধিকার কারো নেই। যে মহিলারা হিজাব পরতে বাধ্য হয় তাদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং তাদের মামলাগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়। হোম অফিসের ইমেলটি পেয়ে এই বিষয়গুলো সর্বপ্রথম মাথায় এসেছে।
উল্লেখ্য হোম অফিস ইসলামি নেটওয়ার্ক(এইচ.ও.আই.এন) নামের ভলান্টারি গ্রুপ কর্তৃক একটি ইমেল প্রেরণ করে হিজাব দিবস উপলক্ষে। যেখানে হিজাবকে “মহিলাদের সুরক্ষার উপায়” বলে বর্ণনা করা হয়েছে ইমেইলে।
ইমেলটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “হিজাব মুসলিম পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পুরুষদের পরিচ্ছন্নভাবে পোশাক পরা এবং আচরণের ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিশক্তি অবনমিত রাখাই হিজাবের অংশ। তাছাড়া সাধারণত নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা পুরুষদের আব্রু করার অন্তর্ভুক্ত।
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “হোম অফিস তার কর্মীদের সাথে সমানভাবে আচরণ করে। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারে। আশ্রয় আবেদনেও পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হোম অফিসের কোনো কর্মীদের যে কোনো দাবি তারা বিভাগীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্থাপন করতে পারে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪