যুক্তরাজ্যের কল্যাণব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা কাটছাঁটের পথে হাঁটছে লেবার সরকার। সমাজ কল্যাণমন্ত্রী লিজ কেনডেল বুধবার এক বিল পেশ করে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৯ লক্ষ ৫০ হাজার নাগরিক এই কাটছাঁটের আওতায় পড়বেন।
বিলে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য ‘পার্সোনাল ইনডিপেনডেন্স পেমেন্ট’ (পিপ) সুবিধা থেকে ৮ লক্ষের বেশি মানুষ এবং তাদের দেখভাল করা ১.৫ লক্ষ মানুষ সেবাপ্রাপ্তির বাইরে থাকবেন। ফলে এই সেক্টর থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার।
এখন থেকে শরীর আংশিক ধোয়া বা নিজে রান্না করতে না পারার মতো সীমাবদ্ধতা থাকলেও, যদি অন্য কোনো গুরুতর শারীরিক বা মানসিক সমস্যা না থাকে, তাহলে আর পিআইপি পাওয়া যাবে না।
বিলটি নিয়ে লেবার পার্টির ভিতরেই ব্যাপক বিদ্রোহের আভাস মিলেছে। অনেক এমপি বিলের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, এটি প্রতিবন্ধী মানুষের আয় কেটে নেওয়ার শামিল। তারা বলেছেন, এর ফলে হাজার হাজার মানুষ দারিদ্র্যের মুখে পড়বে।
ইয়র্ক সেন্ট্রালের এমপি র্যাচেল মাসকেল বলেন, “এই বিল বাস্তবায়ন হলে ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে আট লক্ষ মানুষ পিআইপি থেকে বঞ্চিত হবেন এবং দেড় লক্ষ সেবাদানকারী তাদের ভাতা হারাবেন। এ বিলের একমাত্র ফলাফল হবে দারিদ্র্য।”
লেবার এমপি অ্যান্ডি ম্যাকডোনাল বলেন, “এটি প্রতিবন্ধী মানুষের আয়ের উপর বিশাল আঘাত। আমরা এখনো পরামর্শ পর্বেই আছি, অথচ ভোটে চাপ দেওয়া হচ্ছে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
সরকার যদিও কিছু ছাড়ের বিধান রেখেছে—যেমন ১৩ সপ্তাহের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা, এবং গুরুতর রোগীদের জন্য পুনর্মূল্যায়ন বাতিল—তবুও সমালোচনার ঝড় থামেনি।
প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থা স্কোপ-এর পরিচালক জেমস টেইলর বলেন, “এই বিল প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে। এটি হাজার হাজার মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে। তাদের স্বাধীনভাবে বাঁচা ও কাজ করার সক্ষমতা নষ্ট হবে।”
এদিকে উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নার বিদ্রোহী এমপিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে হুমকি ও ছাড়ের মিশ্রণেও বিলের বিরোধিতা কমছে না।
যুক্তরাজ্যে বিতর্কিত কল্যাণ সংস্কার বিল নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই সংস্কার কি সত্যিই টেকসই কল্যাণব্যবস্থা গঠনের চেষ্টা, না কি সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ নামানোর এক নির্মম কৌশল?
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ জুন ২০২৫