তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে থাকা আফ্রিকার দেশ মিশরকে আটশ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়ার একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ মিশরে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংঘাতের ফলে মিশর হয়ে অনিয়মিত পথে ইউরোপমুখী অভিবাসন ঠেকাতেই এই সহায়তা প্রকল্প হাতে নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
রোববার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন সহায়তা চুক্তিতে সই করেন৷ যদিও ইউরোপের ডানপন্থি দলগুলো এমন চুক্তির বিরোধিতা করছে৷
বেলজিয়াম, ইটালি, অস্ট্রিয়া, সাইপ্রাস এবং গ্রিসের নেতারাও চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ এই চুক্তিটিও ইইউর সাথে আফ্রিকার দেশ টিউনিশিয়া এবং মৌরিতানিয়ার করা চুক্তির মতোই। ওই দুই দেশের সাথেও একই রকম এক চুক্তি সই করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ বলা হয়, দেশ দুটির সীমান্ত সুরক্ষিত করতে অর্থ সহায়তা দেবে ইইউ৷ ওই দুই দেশের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার অনেক দেশ থেকে ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা করেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা৷
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে মিশরের প্রেসিডেন্ট এল-সিসি চুক্তিটিকে মিশর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের মাঝে একটি বাঁক বদল বলে মন্তব্য করেন৷
জানা গেছে, তিন বছরের এই সহায়তা প্রকল্পটিতে মিশরকে ঋণ এবং অনুদান দেয়া হবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কায়রো মিশন জানায়, প্রদেয় অর্থের একটি বড় অংশ অর্থাৎ পাঁচশ কোটি ডলার মাইক্রো ফিনান্সিয়াল অ্যাসিসটেন্সের আওতায় দেয়া হবে৷
এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে ভূমধ্যসাগরীয়, নিকট প্রাচ্য এবং আফ্রিকা অঞ্চলে নিরাপত্তার এবং শান্তি স্থাপনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে মিশর৷ আর ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি এই চুক্তিটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘এই চুক্তি ভূমধ্যসাগরের দুই পাড়ের অংশীদারদের ইচ্ছাকে ফুটিয়ে তুলছে এবং সহযোগিতার একটি নতুন কাঠামোকে অনুপ্রাণিত করছে৷’’
ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, জয়েন্ট ডিক্লারেশন নামে এই চুক্তিটি গণতন্ত্র, মৌলিক স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতের বিষয়েও কাজ করবে৷ তাছাড়া অভিবাসন এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায়ও পারস্পরিক সম্পর্ক আরো গভীর করবে৷
চুক্তির অংশ হিসেবে লিবিয়ার সাথে থাকা সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে মিশরকে সহযোগিতা করবে ইইউ৷ এই সীমান্ত দিয়ে আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীরা অনিয়মিত পথে ইউরোপের দিকে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করে থাকেন৷ তাছাড়া সুদানের চলমান রাজনৈতিক সংঘাত এড়িয়ে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতেও মিশরকে সহযোগিতা করবে ইইউ৷ উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলের পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখের বেশি সুদানি শণার্থীকে মিশরে আশ্রয় দিয়েছে।
মিশরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশটিতে মোট শরণার্থীর সংখ্যা ৯০ লাখেরও বেশি৷ এরমধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থায় লিপিবদ্ধ৷ তাদের অনেকেই ব্যবসাবাণিজ্য গড়ে তুলেছেন আর অনেকেই দেশটির অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে যুক্ত রয়েছেন৷
দশকের পর দশক ধরে সাব সাহারা আফ্রিকার শরণার্থীদের গন্তব্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে মিশর৷ তাছাড়া অনেকেই আবার ইউরোপে পাড়ি জমানোর উদ্দেশে মিশরের সমুদ্র উপকূলকে বেছে নেয়৷
এদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ সব মিলিয়ে ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে মিশরের অর্থনীতি৷ এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে করা এই সহযোগিতা চুক্তি দেশটির অর্থনীতির জন্য সহযোগী হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
সূত্রঃ এপি
এম.কে
১৯ মার্চ ২০২৪