যুক্তরাজ্য ২০২৫ সালের পশ্চিম বলকান সম্মেলনের আয়োজক হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলন পশ্চিম বলকান অঞ্চলের অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াবে, যাতে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট ধরে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করা যায় এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত “পরিবর্তনের পরিকল্পনা” বাস্তবায়িত হয়।
চলতি বছর যুক্তরাজ্য পশ্চিম বলকানের ছয়টি দেশের নেতাদের এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করবে। যা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে সমর্থন করবে।
এছাড়া, এই সম্মেলনে আলোচিত হবে কীভাবে অনিয়মিত অভিবাসনের ট্রানজিট রুট হিসেবে পশ্চিম বলকানকে ব্যবহার রোধ করা যায়। যুক্তরাজ্য সরকার তার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের উপায় ব্যবহার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
বার্লিন প্রক্রিয়া নামে পরিচিত এই সম্মেলন ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করবে, যা যুক্তরাজ্য সরকারের সীমান্ত সুরক্ষা কৌশল বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এর লক্ষ্য হলো মানব পাচারকারী চক্র ধ্বংস করা এবং যাদের এখানে থাকার অধিকার নেই, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।
যুক্তরাজ্যের অন্যতম অভিজ্ঞ কূটনীতিক, ডেম ক্যারেন পিয়ার্স ডিসিএমজি-কে পশ্চিম বলকানের জন্য যুক্তরাজ্যের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি এই অঞ্চলে যুক্তরাজ্যের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে কাজ করবেন এবং সম্মেলনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেবেন।
এই সম্মেলন এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন যুক্তরাজ্য বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানব পাচারকারীদের ধরতে নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, পশ্চিম বলকান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা এবং মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য ব্যবসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাজ্যে বার্লিন প্রক্রিয়া আয়োজন করা ইউরোপীয় নিরাপত্তার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ এবং সরকারের পরিবর্তনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ।
ক্যারেন পিয়ার্স তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজকে এগিয়ে নেবেন। আমি লর্ড পিচকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি গত তিন বছর ধরে পশ্চিম বলকানে যুক্তরাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।”
সীমান্ত নিরাপত্তা ও আশ্রয় বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ঈগল বলেছেন, যদি আমরা মানুষকে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা বন্ধ করতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
সীমান্ত নিরাপত্তা কমান্ডের মাধ্যমে আমরা ইউরোপ ও তার বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করছি, যাতে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা ও সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
সরকার ইতোমধ্যে উত্তর মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া ও কসোভোর সঙ্গে সংগঠিত অভিবাসন অপরাধ মোকাবিলায় নতুন চুক্তি করেছে। আমাদের আন্তর্জাতিক কার্যক্রম এবং যুক্তরাজ্যে আরও কঠোর অভিবাসন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা মানব পাচারকারী চক্রের ব্যবসার মডেল ভেঙে দিচ্ছি।
যুক্তরাজ্যের এই সম্মেলনের আয়োজন জার্মানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে হচ্ছে, যা ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। এটি অপরাধী চক্রগুলোকে দমন করতে টেকসই অংশীদারিত্ব গড়ার কৌশলের সর্বশেষ পদক্ষেপ।
এই ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিউনিসিয়া সফর করেছেন, যেখানে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় আসার মূল কারণগুলো মোকাবিলা করতে প্রকল্পগুলোর জন্য সহায়তা বৃদ্ধির আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য মানব পাচারকারী চক্র ভেঙে দিতে এবং তাদের অবৈধ অর্থায়ন বন্ধ করতে বিশ্বের প্রথম নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
তিনটি ন্যাটো মিত্র দেশ থাকা পশ্চিম বলকান অঞ্চলের নিরাপত্তা যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়ছে, যেখানে রাশিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সক্রিয়, এবং অপরাধী চক্রগুলো ইউরোপজুড়ে অনিয়মিত অভিবাসনের জন্য পশ্চিম বলকানকে বড় ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
যুক্তরাজ্যের বিশেষ দূত প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত “পরিবর্তনের পরিকল্পনার” অন্যান্য লক্ষ্যেও অবদান রাখবেন, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠিত অপরাধ দমন করে ব্রিটিশ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ব্রিটিশ ব্যবসাগুলোর জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করা।
ডেম ক্যারেন পিয়ার্স, যিনি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ছিলেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন—প্রথম নারী যিনি এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এই বসন্তে তার নতুন পদ গ্রহণ করবেন এবং এয়ার চিফ মার্শাল লর্ড পিচের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
সূত্রঃ ইউকে ডট গভ
এম.কে
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫