14.8 C
London
October 16, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

অনিয়মিত এক বাংলাদেশিকে ফেরত নিলে, নিয়মিত পথে একজনকে নেবে ইটালি

অনিয়মিত পথে আসা একজন বাংলাদেশিকে ফেরত নেয়া হলে, বিনিময়ে অপর একজন বাংলাদেশিকে নিয়মিত পথে আসার আসার সুযোগ দেবে ইটালি৷ ইউরোপের দেশটি বাংলাদেশকে এমন প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস৷
এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাটি চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা৷ মঙ্গলবার ইটালির রাজধানী রোমের একটি হোটেলে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন৷
এর আগের দিন সোমবার ইটালির রাজধানী রোমের মেয়র রবার্তো গুয়ালতিয়েরির সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা৷
সেই সাক্ষাত প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোমের মেয়র ‘‘অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলেছেন যে আপনারা খুব মূল্যবান তার জন্য৷ এই শহরের একটা মূল্যবান অংশ আপনারা কন্ট্রিবিউট করছেন এবং আপনাদের কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে রোম শহরের যে উন্নতি হচ্ছে সেটা বারে বারে উনি উল্লেখ করেছেন৷ এবং আপনাদের পরিশ্রম, আপনাদের মেধা, আপনাদের সৃজনশীলতা—এগুলোর খুব প্রশংসা করেছেন৷’’
ইটালিতে বসবাসতরত বাংলাদেশিদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সেসব বিষয় নিয়ে রোমের মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘ভিসার কথা বললাম৷ এই যে লোক বের করে দেয়া হচ্ছে, সেগুলো বললাম৷ যাদের ভিসা দেওয়া হয়েছিল, এখন ভিসা রিনিউ করা হচ্ছে না, সেগুলোর কথা বললাম৷’’
জবাবে ইটালির রাজধানী রোমের মেয়র কী উত্তর দিয়েছেন, তা নিয়েও প্রবাসীদের সামনে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা৷ তিনি বলেন, ‘‘(মেয়র বলেছেন) বাংলাদেশি যারা আছেন, তারা ইটালির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা এমন না যে আমরা তাদের থেকে নিষ্কৃতি পেলে বাঁচি৷ আমরা তাদের রাখতে চাই, এটা পরিষ্কার৷ সম্মানের সঙ্গে রাখতে চাই৷’’
কিন্তু এতে কিছু সমস্যা আছে বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন রোমের মেয়র রবার্তো গুয়ালতিয়েরি৷ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ভেজাল, এই বাংলাদেশ যেখানে যাচ্ছে ভেজালের একটা সৃষ্টি করছে৷ এটা থেকে আমরা বাঁচতে পারছি না৷ এটা থেকে নিষ্কৃতি কীভাবে? আমি বললাম যে আমরা দুই পক্ষ চেষ্টা করি, আমাদেরও কষ্ট হয়৷ তারাও (বাংলাদেশি অভিবাসী) কষ্ট পায়, আমরাও কষ্ট পাই৷ তারা (বাংলাদেশি অভিবাসী) ঠেকায় পড়ে এসবের মধ্যে পড়ে গেছে, এমন না যে তারা আসলে দুষ্ট লোক৷ তারা ভালো লোক, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে দুষ্টুমি করে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে৷ দুষ্টুমি করে যাতে টিকতে না হয় সে জন্য একটা পন্থা বের করতে হবে আমাদের৷’’
সমাধান হিসাবে ইটালির পক্ষ থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘এখন বলছে যে, একজন যদি নিয়ে যাও, আমরা একজন নতুন আনবো৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘একজন ভেজাল লোক অদলবদল করে জিনিসটা পরিষ্কার হয়ে যাক৷ অর্থাৎ জিনিসটা পরিষ্কার৷ তাদেরও ইচ্ছা পরিষ্কার, আমরাও চাই যে পরিষ্কার৷ এখন একজনের পরিবর্তে একজন হবে, নাকি একজনের পরিবর্তে দুই জন হবে, এগুলো নিয়ে আমরা একটু আলাপ করছি যে কী করা যায়৷ এটা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হবে, উপায় নেই আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে৷ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে তাদেরকে এটা করতে হয়৷’’
ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে অনিয়মিত পথে আসা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩৮০৷ এদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৬ হাজার ১৭৫ জন হলেন বাংলাদেশি নাগরিক৷ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিশরীয়দের সংখ্যা সাত হাজার ৪৫৯৷ এর পরেই রয়েছে ইরিত্রিয়া, পাকিস্তান ও সুদানের নাম৷
অনিয়মিত পথে আসা বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গ ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এই যে নানাভাবে আসেন, তাদের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে৷ জাহাজ থেকে সদ্য নামা লোকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে৷ মেয়রকে নিয়েও আলাপ হয়েছে৷ কী করবে এখন, এরা তো এসে গেছেন৷ মেয়র বললেন যে ঠিক আছে৷ এসে যখন গেছে, আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের গ্রহণ করা৷ তাদের এখানে সেটেল করা৷ তাদের (ইটালির) অ্যাটিটিউড দেখলাম যে এরকম না, এক্ষুণি জাহাজে উঠো, ফেরত যাও৷ ওরকম বলেনি৷ ওরকম বলে না তাদের৷ এটাই ভালো লাগে যে, এরা সম্মান করে, মানবিকতা আছে৷’’
একজনের পরিবর্তে একজন হবে, নাকি একজনের পরিবর্তে দুই জন হবে, এসব নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা৷
কিন্তু বাংলাদেশিরা ইটালিতে এসে থাকতে চান না বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন ইটালির মেয়র রবার্তো গুয়ালতিয়েরি৷ এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘মেয়র বললেন, এরা এখানে থাকবে না তো৷ আমি বললাম, কেন? বললেন, তাদের ডেসটিনেশন হলো অন্য দিকে৷ আরো উত্তরে যাবে৷ উত্তরে যেতে যেতে কদ্দুর যাবে, সেটা তারাই জানেন৷ কিন্তু এখানে বেশিদিন থাকেন না৷’’
সমস্যা সমাধানে আলাপ চলমান রয়েছে জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘একটা তো হলো ভেজাল লোক, ঢুকে গেছে কাগজপত্র কিছু নেই৷ ভেজালের মধ্যে আছে৷ ওদেরকে কীভাবে সঠিক পথে নিয়ে আসা যায়৷ অর্থাৎ চেষ্টা হচ্ছে সমাধান করা৷ তাড়িয়ে দেওয়াটা সমাধান না৷ এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে৷ দুই পক্ষেই এটা পরিষ্কার, তাড়িয়ে দেওয়াটা সমাধান না৷’’
ইটালির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাৎ হওয়ার কথাও জানান মুহাম্মদ ইউনূস৷ তিনি বলেন, ‘‘তিন বার দেখা হয়েছে৷ চতুর্থ বার আবার দেখা হবে ডিসেম্বরে৷ উনি বাংলাদেশে আসবেন তখন৷ কয়েকদিন আগেই দেখা হয়েছে৷ সেটা হলো নিউইয়র্কে৷’’
মানবপাচার ঠেকাতে সরকারের তৎপরতা প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা৷ তিনি বলেন, ‘‘হিউম্যান ট্রাফিকিং যে জিনিসটা বলে, আপনারা সবাই পরিচিত আছেন, মস্ত বড় জিনিস, বহুলোক প্রাণ দেয় ইত্যাদি৷ এগুলো যাতে দিতে না হয় সেটার চেষ্টা করা৷ যেহেতু তাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এটা বহুবার বুঝিয়েছি যে জিনিসটা যাতে হয়, সুন্দরভাবে হয় এবং আপনারা যাতে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হন৷’’
রোম শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশিরা আছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘রোম শহরের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই, যেখানে বাংলাদেশি শেফ নেই৷ বাংলাদেশি শেফ চলে গেলে, রোম শহর অচল হয়ে যাবে৷’’
এসময় প্রবাসীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘অভ্যুত্থানের সময় আমরা যে সরকার পেলাম, যে অবস্থা পেলাম—এটা লন্ডভন্ড অবস্থা৷ টাকা-পয়সা সব খালি৷ চলাফেরা, বেতন দেবার উপায় নেই৷ মানুষের টাকা পরিশোধ করার উপায় নেই৷ আন্তর্জাতিক (ঋণ) পরিশোধ করার উপায় নেই৷ একদম তলানিতে আমরা৷’’
তখন রেমিট্যান্সের উপরই আস্থা রেখেছিলেন বলে জানান মুহাম্মদ ইউনূস৷ তিনি বলেন, ‘‘এই রেমিট্যান্স না হলে এই সরকার টিকে থাকা বড় মুশকিল হতো৷’’
ইটালির রোমে দুই দিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ বুধবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে৷
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে অংশ নিতে গত রোববার (১২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে ইটালির রাজধারী রোমে পৌঁছান অধ্যাপক ইউনূস৷
সূত্রঃ ইনফোমাইগ্র্যান্টস
এম.কে
১৬ অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

টাকা দিতে পারছে না সাকিবের কোম্পানি, আইএফআইসি ব্যাংকের লিগ্যাল নোটিশ

আমিরাতে সাধারণ ক্ষমা পেয়েছেন ৫০ হাজার বাংলাদেশি

পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে গঠিত কমিটি বাতিল