পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাকে ‘অনিরাপদ’ দাবি করে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের একদল আইনজীবী বলেছেন, রুয়ান্ডায় অভিবাসী পাঠাতে ব্রিটেনের পরিকল্পনা আইন সম্মত নয়৷ লন্ডনের আপিল আদালতে দাঁড়িয়ে এ কথা জানান আইনজীবীরা৷
আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যে না রেখে, প্রায় চার হাজার মাইল দূরের দেশ রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করতে চায় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকার৷ এজন্য দেশটির সঙ্গে ১৪ কোটি পাউন্ডের একটি চুক্তিও করেছে তারা৷ তৈরি করা হচ্ছে আবাসন৷
ফ্রান্স থেকে ছোটো ছোটো নৌকা নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা আশ্রয়প্রার্থী এবং অন্যান্য রুটে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রবাহ বন্ধ করা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শীর্ষ অগ্রাধিকার৷
আশ্রয়প্রার্থী বা অভিবাসীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে গত জুনেই প্রথম ফ্লাইটটি পরিচালনার চেষ্টা করেছিল যুক্তরাজ্য৷ কিন্তু ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের সিদ্ধান্তে পিছু হটতে বাধ্য হয় ব্রিটেন সরকার৷ আইনি পদক্ষেপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো অভিবাসীকে রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা যাবে না সিদ্ধান্ত দেয় আদালত৷
ডিসেম্বরে লন্ডনের হাইকোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের নীতিটি আইনসম্মত বলে রায় দিয়েছে৷ কিন্তু আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থাসহ সিরিয়া, সুদান, ইরাক, ইরান এবং ভিয়েতনামের আশ্রয়প্রার্থীরা৷
তাদের আইনজীবীরা বলেছেন, রুয়ান্ডাকে একটি ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ বলে সরকারের যে যুক্তি দিচ্ছে, তা ত্রুটিপূর্ণ৷
গত সপ্তাহে লন্ডনের আপিল আদালতে শুরু হয়েছে চার দিনের শুনানি৷ শুনানির শুরুতেই আইনজীবী দলের সদস্য রাজা হুসেইন বলেন, রুয়ান্ডা একটি কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্র৷ বিরোধীদের জেল, নির্যাতন ও হত্যা পর্যন্ত করে এই রাষ্ট্রটি৷ ফলে এই দেশ আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নিরাপদ হতে পারে না৷
আদালতে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরাও জোরের সঙ্গে বলছেন, রুয়ান্ডার সঙ্গে চুক্তির সময় সার্বিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার৷
অবশ্য রুয়ান্ডাও বলেছে, অভিবাসীদের সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হবে৷ ব্রিটেনের সঙ্গে করা চুক্তি তাদের জন্য আরো সম্ভাবনা তৈরি করবে৷
মামলার তিন বিচারকের একজন প্রধান বিচারপতি ইয়ান বার্নেট বলেন, রুয়ান্ডার নিরাপত্তার বিষয়টিই হয়তো মূল সমস্যা হবে।
গত বছরের মার্চে ‘স্মল বোটস বিল’ নামে একটি নতুন আইনের প্রস্তাব করেছে যুক্তরাজ্য সরকার৷ এই আইনের আওতায় ইংলিশ চ্যানেলে পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসর প্রত্যাশীদের ‘‘অপরাধী’’ হিসেবে গণ্য করা হবে। ফলে আশ্রয়ের অধিকার হারাবেন তারা৷ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত অথবা তৃতীয় দেশে পাঠানো হবে৷
সুনাক প্রশাসন মনে করে, এই আইন মানব পাচারকারীদের ব্যবসায়িক মডেল ভেঙে ফেলবে৷ কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, এটি অবাস্তব, অনৈতিক এবং অকার্যকর৷ তাদের দাবি, এমন আইন দিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের চ্যানেল পাড়ি দেয়ার চেষ্টা থামানো যাবে না৷
২০২২ সালে ছোটো নৌকা নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটির দক্ষিণ উপকূলে আসেন ৪৫ হাজার অভিবাসী৷ যা তার আগের দুই বছরের তুলনায় অন্তত দশ গুণ বেশি৷
চলতি বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অন্তত ৫৬ হাজার আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে আসতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ২০২২ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি৷ সম্প্রতি, আদালতে উপস্থাপন করা যুক্তরাজ্য সরকারের এক নথিতে এমন আভাস দেয়া হয়েছে৷
চলতি বছর, এখন পর্যন্ত চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি অভিবাসী ব্রিটেনে পৌঁছেছেন৷ আর এ বছরের মার্চ পর্যন্ত এক লাখ নয় হাজারেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাজ্য৷ এদের মধ্যে ৪৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে রাখা হয়েছে হোটেলে৷ আবাসনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিদিন ৬২ লাখ পাউন্ড খরচ হচ্ছে৷