TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

অপরাধ নয়, তবুও নথিভুক্ত—এনসিএইচআই নিয়ে বড় পরিবর্তনের পথে যুক্তরাজ্য

এনসিএইচআই বাতিলের পথে যুক্তরাজ্য, ‘টুইট পুলিশিং’ থেকে সরে আসতে চায় পুলিশ নেতৃত্ব।
যুক্তরাজ্যে নন-ক্রাইম হেট ইনসিডেন্টস (NCHI) বা অ-ফৌজদারি ঘৃণাজনিত ঘটনার রেকর্ডিং ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করতে যাচ্ছে পুলিশ নেতৃত্ব। আগামী মাসে প্রকাশিত হতে যাওয়া এক যৌথ পর্যালোচনায় কলেজ অব পলিসিং ও ন্যাশনাল পুলিশ চিফস’ কাউন্সিল (NPCC) এই প্রস্তাব উপস্থাপন করবে বলে জানা গেছে।
কলেজ অব পলিসিংয়ের চেয়ারম্যান লর্ড হারবার্ট বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে বিদ্যমান ব্যবস্থা ভারসাম্য হারিয়েছে। তাঁর মতে, কেবলমাত্র সবচেয়ে গুরুতর ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে একটি “সাধারণ-বুদ্ধিনির্ভর” পদ্ধতি গ্রহণ করা হলে পুলিশিং ব্যবস্থাকে নতুন করে ভারসাম্যে আনা সম্ভব হবে।
নন-ক্রাইম হেট ইনসিডেন্ট বলতে এমন অভিযোগ বোঝায়, যা জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা অন্য কোনো সুরক্ষিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিদ্বেষপ্রসূত বলে দাবি করা হয়, তবে যা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না। বর্তমানে এসব ঘটনা অপরাধ না হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের নথিতে সংরক্ষিত থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের সময় তা উঠে আসে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান নির্দেশনায় বলা হয়, ভবিষ্যতে সহিংসতা বা গুরুতর অপরাধে রূপ নিতে পারে—এমন ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্যই এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচকরা বলে আসছেন, এতে পুলিশের সময় ও সম্পদের অপচয় হয় এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে।
লর্ড হারবার্ট জানান, ২০০৫ সালে স্টিফেন লরেন্স হত্যাকাণ্ডের তদন্ত-পরবর্তী সুপারিশের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা চালু হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারের ফলে পুলিশকে এখন অনলাইনের “সাধারণ বিরোধ ও বিতর্ক” পর্যবেক্ষণে টেনে নেওয়া হচ্ছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, পুলিশ “টুইট পুলিশিং” করতে চায় না।
এনসিএইচআই নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক ও সংবাদ শিরোনামগুলো পুলিশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, পুলিশ এমন বিষয়ে জড়িয়ে পড়ছে—এমন ধারণা তৈরি হয়েছে, যেখানে তাদের থাকা উচিত নয়। এ কারণেই পুরো ব্যবস্থাটি নতুন করে পর্যালোচনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
ন্যাশনাল পুলিশ চিফস’ কাউন্সিলের সহসভাপতি র‍্যাচেল সোয়ান বলেন, অনলাইন সাংস্কৃতিক বিতর্কের মীমাংসাকারী হওয়া পুলিশের কাজ নয়। তবে একই সঙ্গে তিনি জোর দেন, কমিউনিটির উত্তেজনা, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি এবং সহিংসতার পূর্বলক্ষণ শনাক্ত করার সক্ষমতা পুলিশের কাছে থাকা জরুরি।
তিনি বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা ও বাস্তব হুমকির ওপর পুলিশি মনোযোগ নিশ্চিত করাই এই পর্যালোচনার মূল বিবেচ্য বিষয়।
ভবিষ্যতে এনসিএইচআই সংক্রান্ত নীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মন্ত্রীরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রেখে একটি “সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত” নীতি চায়, তবে পর্যালোচনার ফলাফল প্রকাশের আগে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায় না।
এর আগে দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছিল, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ৪৩টি পুলিশ বাহিনী ২০১৪ সাল থেকে এক লাখ ৩৩ হাজারের বেশি নন-ক্রাইম হেট ইনসিডেন্ট রেকর্ড করেছে। চলতি বছরের অক্টোবরে মেট্রোপলিটন পুলিশ এনসিএইচআই তদন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয়, যাতে কর্মকর্তারা ফৌজদারি অপরাধের ওপর মনোযোগ দিতে পারেন।
এপ্রিল মাসে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনক এনসিএইচআই বাতিলের দাবি তুলে বলেন, এই ব্যবস্থা পুলিশের সময় নষ্ট করছে এবং ন্যায়বিচারের পরিবর্তে মতাদর্শ ও অভিযোগ তাড়ায় ব্যস্ত রাখছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে সেলফ এপ্লয়েডদের ‘কাজের অধিকার’ যাচাই বাধ্যতামূলক করা হবে

বিদেশ ভ্রমণে ব্রিটিশদের লাগবে নতুন ফর্ম

অনলাইন ডেস্ক

ইউকের ডিজিটাল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা অভিবাসীদের মধ্যে ভয় ও বঞ্চনা তৈরি করছেঃ গবেষণা