কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমানোয় রেকর্ড করেছে এশিয়া। ২০২৩ সালে রেকর্ড ৬৯ লাখ এশীয় কাজের খোঁজে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আর এই রেকর্ড হওয়ার পেছনে রয়েছে ফিলিপাইন, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের উন্নত জীবন-জীবিকার অন্বেষণের তাগিদ।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ইনস্টিটিউট (এডিবিআই), অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংকলিত এই তথ্যগুলো আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ব্যাংককে একটি গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
২০২২ সালে অভিবাসনের পরিসংখ্যান পরিবর্তন করে ৪৬ লাখ থেকে ৫২ লাখ দেখানো হয়েছে।
এশিয়া থেকে অন্যান্য অঞ্চলে অভিবাসীর সংখ্যা ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ৬১ লাখে উন্নীত হওয়ার পর করোনা মহামারিতে এই সংখ্যা কমে যায়। তারপর আবার অভিবাসনের সংখ্যা ফিরেছে অনেকটা আগের জায়গায়। গত বছর অভিবাসী বেড়েছে ৩৪ শতাংশ এবং আগের চেয়েও অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ বেড়েছে।
এডিবিআইয়ের মতে, শুধু শ্রম অভিবাসনের চিত্র আগের জায়গায় ফিরে যাওয়াই নয়, বরং এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে রয়েছে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো কাঠামোগত পরিবর্তন।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে অভিবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্সও ২০২৩ সালে রেকর্ড গড়ে প্রায় ৩৭ হাজার ১৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা মোট বৈশ্বিক রেমিট্যান্সের ৪৩ শতাংশ।
অভিবাসী পাঠানোয় সবচেয়ে এগিয়ে ফিলিপাইন। ২০২৩ সালে দেশটির ২৩ লাখ মানুষ অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে, যা ২০২২ সালের চেয়ে ৯৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া, এশিয়া থেকে মোট অভিবাসীর এক-তৃতীয়াংশই ফিলিপাইনের। ১৩ লাখ অভিবাসী পাঠিয়ে এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তান। দেশটি থেকে অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার।
ফিলিপাইন থেকে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমানো শ্রমিকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নারী। তাদের বেশির ভাগই গৃহকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নার্স এবং পরিচর্যাকারী হিসেবে কাজ করেন। তাদের শীর্ষ গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, হংকং ও সিঙ্গাপুর।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শ্রমিকের বেশির ভাগই নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত।
অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেকই পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলিতে গেছে। প্রায় ১৬ লাখ কর্মী গ্রহণ করে এ ক্ষেত্রে অভিবাসীদের গন্তব্যের শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। এর পরই আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোসহ দক্ষিণ এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন ২০২৩ সালে অনেক বেশি ছিল। তবে অন্যান্য দেশেও গেছেন অভিবাসীরা। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় এবং ফিলিপাইনের অনেক কর্মী গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলোতে যেখানে ইংরেজিভাষী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেশি, সেসব দেশে ভারতীয়দের পাড়ি জমানো অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী পাঠানোয় শীর্ষে ভারত।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার এইচ-১বি ভিসা ইস্যু করেছে, যা প্রায়শই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা ব্যবহার করেন। তবে ভিসার সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩-এ কিছুটা কমেছে।
এদিকে, ভারতীয়দের তুলনায় চীনা নাগরিকদের মার্কিন ভিসা ইস্যুর পরিমাণ কম হলেও তা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ২৭৫ শতাংশ। করোনা মহামারি এবং চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার কারণে এই সংখ্যা ২০২০ থেকে ২০২২-এর মধ্যে অনেক কমেছিল।
ওশেনিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স বেড়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে আংশিকভাবে কমেছে মধ্য এশিয়ার রেমিট্যান্স।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
২৮ জুন ২০২৪