লেবার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভেট কুপার হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রশ্নোত্তর পর্বে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তার সরকার বৈধ অভিবাসনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (target) নির্ধারণ করবে না। বরং, বাস্তবমুখী ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থায় জনআস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
লেবার এমপি ক্রিস মারে একাধিকবার প্রশ্ন করেন, সহিংসতা ও ছুরি অপরাধ রোধে সরকার যেভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করেছে, অভিবাসনের ক্ষেত্রেও কেন তেমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে না। জবাবে ইয়ভেট কুপার বলেন,
“অতীতে অভিবাসন নিয়ে এত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, অথচ বাস্তবে উল্টোটা হয়েছে। কনজারভেটিভ সরকার নিট অভিবাসন কমানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও মাত্র চার বছরে তা চারগুণ বেড়ে গেছে। এই পটভূমিতে জনগণের আস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে – আমরা সেই ভুল আর করবো না।”
তিনি আরও বলেন, অভিবাসনের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা না করে কার্যকর নীতিমালার মাধ্যমে বাস্তব পরিবর্তন আনার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে লেবার সরকার।
তিনি বলেন, “ আমরা জনগণের সাথে নতুন করে বিশ্বাস তৈরি করতে চাই। জনআস্থার জন্যই আমরা এমন কিছু করবো না যা পরে ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে।”
প্রতিবেদনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশে ইয়ভেট কুপার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, যুক্তরাজ্যে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উগ্রবাদ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তিনি জানান, গত তিন বছরে ১১৪ জন কিশোর সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে, যেখানে আগের লেবার সরকারের শেষ তিন বছরে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ জন।
কুপার বলেন, মাত্র ১৩ বছর বয়সী তরুণদের মাঝেও ইসলামপন্থী, ডানপন্থী বা সহিংসতায় মোহগ্রস্ত এমন এক ধরনের ‘মিশ্র ও অস্পষ্ট মতাদর্শ’-এর দেখা মিলছে, যা আমাদের নিরাপত্তা ও সমাজ উভয়ের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কমিটির এই শুনানিতে ইয়ভেট কুপারকে অভিবাসন ছাড়াও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও সমাজিক ন্যায়বিচার সংক্রান্ত নানা বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তবে তিনি প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে বাস্তবতার নিরিখে লেবার সরকারের নীতিমালার পক্ষেই অবস্থান নেন।
বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসন নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারের ব্যর্থতার দায় কুপার স্পষ্টভাবে তুলে ধরায় লেবার সরকারের কৌশল এখন প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার দিকে। তবে অভিবাসনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করায় বিরোধী দল ও জনমনে কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ জুন ২০২৫