17.9 C
London
May 31, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

অভিবাসন আইন কঠোর করতে যাচ্ছে গ্রিস

গ্রিসে অনিয়মিতভাবে সাত বছর থাকার পর একজন অভিবাসী নিয়মিত হবার আবেদন করতে পারতেন৷ দেশটির সরকার আইনের সেই বিধানটি বাতিল করার পরিকল্পনা নিয়েছে৷ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্যই এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ভূমধ্যসাগরীয় দেশটি৷

২৮ মে (বুধবার) মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস এ কথা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখে তাদের নির্বাসন দ্রুত করতে আইন করতে যাচ্ছে গ্রিস৷

এদিন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে একটি আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা অনিয়মিতভাবে গ্রিসে ঢোকেন বা আমাদের দেশে থাকেন, যদি তাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে তাদের জন্য শাস্তি আরো কঠোর হবে৷’’

মিৎসোতাকিস বলেন এই আইনটির সাহায্যে ‘‘আরো কার্যকর এবং ন্যায্যতার’’ মাধ্যমে নির্বাসন দ্রুত করার লক্ষ্য থাকবে৷

অভিবাসনমন্ত্রী মাকিস ভোরিদিস বলেছেন, মন্ত্রিসভা আইনটির খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে৷ সেখানে অনিয়মিতভাবে প্রবেশ এবং বসবাসের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷

জুনে গ্রিক পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে৷ সেখানেই সংশোধিত আইনের খসড়াটি বিল আকারে উত্থাপন করা হবে৷ আশা করা হচ্ছে, বিলটি পাস করতে খুব একটা বাধার মুখে পড়বে না সরকার৷ কারণ, তারা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে৷

২৯ মে (বৃহস্পতিবার) গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী মাকিস ভোরিদিস জানিয়েছেন, প্রচলিত আইনে থাকা সুযোগটির অপব্যবহার করা হচ্ছে৷ তাই সরকার এটি বাদ দেয়ার কথা ভাবছে৷

গত বছর ৭৪ হাজার অনিয়মিত অভিবাসীকে আটক করেছিল গ্রিক পুলিশ৷ তাদের মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার জনকে প্রত্যাবাসন বা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে বলে জানান মাকিস ভোরিদিস৷

দেশটির সংবাদমাধ্যম স্কাই-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসনমন্ত্রী বলেন, অনিয়মিত অভিবাসীদের আটক করা হলে নির্বাসন এড়াতে মিথ্যা তথ্য দেন তারা৷ এমনকি, তারা যে দেশটির নাগরিক, সেই দেশের নাম না বলে অন্য কোনো নাম বলেন৷ এতে নির্বাসন প্রক্রিয়াটি মাসের পর মাস ধরে আটকে থাকে বলে দাবি করেন মন্ত্রী৷

গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী বলেছেন, আইনটি কার্যকর হলে যারা অনিয়মিতভাবে গ্রিসে থাকবেন তারা কখনও নিয়মিত হবেন না, কখনও বসবাসের অনুমতি পাবেন না৷

অভিবাসন সম্পর্কিত বর্তমান আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যত বেশি সময় ধরে আপনি অনিয়মিতভাবে (গ্রিসে) থাকবেন, আপনার জন্য তত বড় পুরস্কার অপেক্ষা করছে৷’’

মাকিস ভোরিদিস বলেন, প্রতি বছর প্রায় ৫৫ থেকে ৬৫ হাজার মানুষ অনিয়মিতভাবে গ্রিসে ঢোকেন৷ তাদের মধ্যে অর্ধেকের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর করা হয়৷

তিনি বলেন, ‘‘এখন থেকে যারা অনিয়মিতভাবে গ্রিসে থাকবেন তারা কখনও নিয়মিত হবেন না, কখনও বসবাসের অনুমতি পাবেন না৷’’

মন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা নিয়মিত না হয়েও এখানে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে৷’’

তিনি বলেন, কোনো অভিবাসীকে বা প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীকে নির্বাসনের আগে প্রশাসনিক আটকের মেয়াদ ১৮ মাস থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷

অনিয়মিত অভিবাসীরা যেকোনো নিষেধাজ্ঞা এড়াতে স্বেচ্ছাপ্রত্যাবাসন বেছে নিতে পারেন বলেও জানিয়েছেন অভিবাসনমন্ত্রী৷

ভোরিদিস বলেছেন, নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করতে নতুন নিয়ম জুলাইয়ের মধ্যে কার্যকর করা হবে৷

ব্যাংক অফ গ্রিসের গভর্নর ইয়িয়ানিস স্টোরনারাস জানিয়েছে, দেশটিতে প্রায় দুই লাখ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে৷

তুরস্কের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন কিছুটা কমে আসায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে গ্রিসে অভিবাসীপ্রবাহ ৩০ শতাংশ কমেছে৷

তবে ভূমধ্যসাগরীয় নতুন একটি অভিবাসী পাচার রুট ধরে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লিবিয়া থেকে গ্রিক দ্বীপ ক্রিট এবং গাভদোসে অভিবাসীদের আসা বেড়েছে৷

সার্বিকভাবে গ্রিসে হাজার হাজার প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থী আটকা পড়েছেন৷ আশ্রয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং আশ্রয় ব্যবস্থার উপর চাপ কমাতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী বিভাগ গত সপ্তাহে ইউরোপীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে৷ এর মধ্যে দিয়ে সদস্য দেশগুলো প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি, ইইউ স্বীকৃত নিরাপদ দেশগুলোতেও প্রত্যাবাসনের অনুমতি দেয়া যাবে৷

ভূমধ্যসাগরীয় এই দেশটি ২০১৫-২০১৬ সালের ইউরোপমুখী অভিবাসনপ্রবাহের সময় সম্মুখভাগে ছিল৷ ওইসময় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার যুদ্ধ ও দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের আশায় দশ লাখেরও বেশি মানুষ ইউরোপে আসেন৷

অভিবাসনপ্রবাহের কারণে গ্রিস এবং ইটালির মতো ইউরোপের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী দেশগুলো তাদের সীমান্ত কঠোর করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এরপর থেকে অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে৷ তারপরও গ্রিসে অভিবাসন এখনও রাজনৈতিকভাবে আলোচিত বিষয়৷ ফলে, প্রধানমন্ত্রী মিৎসোতাকিস তার অবস্থান আরো কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷

সূত্রঃ রয়টার্স, এএফপি

এম.কে
৩০ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

ইলন মাস্ক আবারও বিশ্বের শীর্ষ ধনী

নিউজ ডেস্ক

স্কটল্যান্ডে যোগ্যতা ছাড়া ‘লয়্যার’ উপাধি ব্যবহারে শাস্তির বিধান আসছে

নিউজ ডেস্ক

ইন্টারনেটে তুমুল জনপ্রিয় হাসবুল্লাহ গৃহবন্দী

নিউজ ডেস্ক