নেট মাইগ্রেশন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পরিকল্পনার পক্ষে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এমপি। তার বক্তব্যের পর এমপি ও বিভিন্ন শিল্পখাতের ব্যবসায়ীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। এক ভাষণে কিয়ার স্টারমার বলেন, কঠোর অভিবাসন নীতি ছাড়া যুক্তরাজ্য “অচেনা মানুষদের দ্বীপে” পরিণত হতে পারে।
সমালোচকরা স্টারমারের বক্তব্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে নোংরা মানসিকতার লোক বলে মন্তব্য করেছেন।
স্টারমার এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে গার্ডিয়ানকে বলেন: “অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে বিশাল অবদান রাখে, আমি তা কখনোই অস্বীকার করবো না।” তবে তিনি বলেন, “যারা আসবেন, তাদের ভাষা শিখতে ও সমাজে মিশে যেতে হবে।”
ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন: “জাতি পরিচালিত হয় নিয়মের মাধ্যমে—সেগুলো লেখা হোক বা অলিখিত—যা আমাদের মূল্যবোধ ও পারস্পরিক দায়িত্ব নির্ধারণ করে। বৈচিত্র্যপূর্ণ এক জাতি হিসেবে, আমরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছি।”
লেবার এমপি জারাহ সুলতানা স্টারমারকে “পাওয়েলের বক্তব্য অনুকরণকারী” বলে অভিযুক্ত করেন। তিনি এক্সে লেখেন: “ঐ বক্তব্য ঘৃণা ও বিভাজনের সূচনা করেছিল। এখন তা পুনরাবৃত্তি করা লজ্জার।”
গ্রিন পার্টির নেতা হতে আগ্রহী জ্যাক পোলানস্কি ব্লুস্কাইতে লেখেন, স্টারমারের শব্দচয়ন “সুবোধ্যভাবে পাওয়েলীয়”।
লেবার এমপি সারাহ ওয়েন বলেন: “ডানপন্থার পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা অন্ধকার পথে হাঁটছি। ‘অচেনা দ্বীপ’ এ পরিণত না হতে হলে আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে—মানুষের জীবনে, সমাজে।”
নাদিয়া উইটোম, লেবার এমপি, বলেন: “অভিবাসন নিয়ে এমন ভীতিকর বক্তব্য কেবল বিভাজনই বাড়ায়, এটা বিপজ্জনক।”
সরকারের নতুন ইমিগ্রেশন শ্বেতপত্রে ভিসা নিয়ন্ত্রণ, ইংরেজি ভাষার পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত নানা পরিকল্পনা উঠে এসেছে। হোম অফিসের এক মূল্যায়নে দেখা গেছে, এসব পরিবর্তনের ফলে বছরে প্রায় ১ লক্ষ অভিবাসী কম আসবে।
২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে যুক্তরাজ্যে নেট মাইগ্রেশন ছিল ৭,২৮,০০০। পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকারের সময় তা ৯,০০,০০০ ছাড়িয়ে যায়।
স্টারমার বলেন, বর্তমান ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের কম মজুরির বিদেশি কর্মী আনতে উৎসাহিত করছে, যা দেশের তরুণদের অবমূল্যায়ন করে। বিভিন্ন খাতে অবদান রাখা অভিবাসীরা—যেমন NHS, প্রকৌশল খাত, স্বেচ্ছাসেবীদের— দ্রুত স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেওয়া হবে। যদিও নাগরিকত্ব পাওয়ার সময়সীমাও ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার প্রস্তাব রয়েছে হোয়াইট পেপারে।
স্টারমার তার নির্বাচনী ইশতেহারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন: “আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা পূরণ করতে এগিয়ে যাচ্ছি—অভিবাসন কমানো, দক্ষতা বাড়ানো, ব্রিটিশ শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৩ মে ২০২৫