TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

‘আই লাভ মুহাম্মদ’ সাইনবোর্ডে ভারতে মুসলিমদের উপর ধরপাকড় ও উচ্ছেদ

ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরের সাঈদ নগরে ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়, যাতে লেখা ছিল ‘আই লাভ মুহাম্মদ’। লাল রঙের হার্ট চিহ্নসহ এই সাইনবোর্ড মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের উদ্দেশ্যে মিলাদুন্নবী উদযাপনের অংশ হিসেবে স্থাপন করা হয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু হিন্দু ব্যক্তি এই সাইনবোর্ডকে লক্ষ্য করে আপত্তি জানান এবং পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়, কয়েক ঘণ্টার বিশৃঙ্খলার পর ওই রাতেই সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনার পর নয়জন মুসলিম পুরুষ ও ১৫ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দা মোহিত বাজপায়ী জানিয়েছেন, তিনি ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা নিয়ে আপত্তি করছেন না, তবে সাইনবোর্ডটি যে স্থানটি ছিল, সেখানে রাম নবমী উদযাপন হয়। তিনি বলেন, “সংবিধান সব ধর্মকে সমান অধিকার দিয়েছে, তবে নতুন প্রথা চালু করতে হলে নতুন স্থান বেছে নিতে হবে।”

মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) জানিয়েছে, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই সংক্রান্ত প্রচারণা নিয়ে অন্তত ২২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, এবং আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে নামভুক্ত করা হয়েছে। বেরেলিতে ৮৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সাঈদ নগরের মুসলিমরা বলছেন, সাইনবোর্ডটি এমন একটি উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয়েছিল, যেখানে প্রতিবছর মিলাদুন্নবী উদ্‌যাপন করা হয়। স্থানীয়রা দাবি করছেন, সরকারি অনুমতি নিয়েই তারা সজ্জা করেছিল। তাদের মধ্যে এক যুবক বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকের ধর্ম পালনের অধিকার আছে, তবুও ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করতে পারছি না।”

আইনজীবী এম এ খান জানিয়েছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে শোভাযাত্রায় ব্যানার ছিঁড়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, যদিও অনেকেই ওই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।

উত্তর প্রদেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ মুসলিম বাস করে, যা সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। প্রদেশটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে ২০১৭ সাল থেকে শাসিত। তার নীতি ও বক্তব্য মুসলিমবিরোধী বলে সমালোচিত।

কানপুরের ঘটনার কয়েক দিন পর, ২৭০ কিলোমিটার দূরে বেরেলিতে এর প্রভাব দেখা দেয়। বেরেলি সুন্নি মুসলিমদের প্রধান ঘাঁটি। ১০ সেপ্টেম্বর নয়জন মুসলিম ও একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। মুসলিম গোষ্ঠী ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের প্রধান মাওলানা তৌকির রেজা খান প্রতিবাদে সমাবেশ ডাকেন, যদিও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।

২৫–২৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা অনুযায়ী, হাজার হাজার মুসলিম জুমার নামাজের পর ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা পোস্টার হাতে ধরে সমাবেশে অংশ নেন। পুলিশের লাঠিপেটা এবং গ্রেপ্তারি ঘটেছে। শহরে ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়।

যোগী আদিত্যনাথ লখনউতে বলেছেন, “বেরেলিতে অস্থিতিশীলতা সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট হয়েছে। কখনো কখনো কঠোরতা প্রয়োজন।” এই মন্তব্যের পর মুসলিমদের ওপর দমন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্ছেদ ও মামলা কেন্দ্রিক এই অভিযান মুসলিমদের ধর্মীয় ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় ভীতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে। এপিসিআর সাধারণ সম্পাদক নাদিম খান বলেন, “নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সম্প্রদায়ের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।”

সূত্রঃ আল জাজিরা

এম.কে

আরো পড়ুন

ভারতীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে জরুরি তলব পাকিস্তানের

মরদেহ গোসল করানোর কাজে কর্মী নিচ্ছে কুয়েত

২০৫০ সাল পর্যন্ত হজের পঞ্জিকা প্রকাশ, গরমকালে হজ পড়বে না ২৫ বছর