মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে বিবৃতি দিতে বাধ্য করছে বলপূর্বক বাংলাদেশের পুলিশ। জোর করে তাদেরকে বলানো হচ্ছে যে তাদের স্বজনদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তথ্য তারা গোপন করে ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে।
২০২১ সালের আগস্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ৫৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বস্ত এবং ধারাবাহিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিতভাবে বলপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটায়। দাতা গোষ্ঠী, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিকদের আহ্বান উপেক্ষা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই অপসংস্কৃতি মোকাবেলা করতে হবে।’
তাদের দাবি, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নিজেরাই বিবৃতিগুলো লিখছে এবং পরিবারগুলোকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করতে বলছে।
হংকংয়ের এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ২৮ জানুয়ারি ভয়েজ অব আমেরিকাকে বলেন, ‘বিবৃতি অনুসারে, নিখোঁজ ব্যক্তিরা নিজেরাই আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল এবং পরিবারগুলি তাদের বলপূর্বক নিখোঁজের মামলা হিসাবে মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করেছিল।’
তিনি বাংলাদেশের আধাসামরিক র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘অপরাধীদের বহিষ্কারের প্রয়াসে তথাকথিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে ভিকটিম পরিবারকে বাধ্য করছে পুলিশ ও র্যাব।’
আশরাফুজ্জামান যোগ করেন, গত মাসে র্যাবের ওপর মার্কিন মানবাধিকার-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের ওপর সাম্প্রতিক চাপ সৃষ্টি হয়।
এরইমধ্যে বাংলাদেশের এলিট আধাসামরিক বাহিনীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
১০ ডিসেম্বর র্যাব এবং ছয়জন প্রাক্তন ও বর্তমান অফিসারের উপর মানবাধিকার-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শত শত বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তোলা হয়।
২০১০ সাল থেকে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি কয়েক ডজন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেগুলোয় দাবি করা হয়, পুলিশ, সামরিক, র্যাব এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এমন লোকদের বলপূর্বক গুমের সাথে জড়িত ছিল যারা বেশিরভাগই ছিল রাজনৈতিক কর্মী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরোধী ভিন্নমতাবলম্বী।
বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের মতে, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে অন্তত ৬০৫ জন লোক বলপূর্বক গুমের মাধ্যমে নিখোঁজ হয়েছে। যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের মধ্যে ৮১ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং ১৫৪ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
৩০ জানুয়ারি ২০২২
আরআর/এনএইচ