যুক্তরাজ্যের একটি সার্ভের রিপোর্টে দেখা যায় যুক্তরাজ্যের সংসদ ও বিবিসির মতো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পাবলিক মূল্যায়নে এগিয়ে রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিং’স কলেজ লন্ডন জরিপে কেবলমাত্র এনএইচএস, সশস্ত্র বাহিনী এবং রাজপরিবারের পিছনে রয়েছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ জনসাধারণ যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আইনী ব্যবস্থা বা বিবিসির চেয়ে বেশি মূল্যবান বলে মনে করেন।
কিং’স কলেজ লন্ডনের পরিচালক অধ্যাপক ববি ডাফি বলেন কিং’স কলেজ যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর লিগ টেবিলে কেবল এনএইচএস, সশস্ত্র বাহিনী এবং রাজপরিবারের পিছনে অবস্থান করছে। কিং’স কলেজ ইতোমধ্যে জনসাধারণের মূল্যায়নে বিশ্বের সেরা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
মে মাসে পরিচালিত ২,৬০০ জনের প্রতিনিধি জরিপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়কে তৃতীয় অবস্থানে রাখে। যেখানে সিভিল সার্ভিস, সংবাদপত্র বা সংসদকে মূল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জরিপে এগিয়ে রেখেছিল। লেবার পার্টি ও রক্ষণশীল সমর্থকদের এই জরিপে অনুরূপ সমর্থন দিতে দেখা যায়।
একটি তথ্যে দেখা যায় ১৯৮৮ সালের জরিপে ৬৮% মতামত দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মূলত রাষ্ট্রীয় অনুদানপ্রাপ্ত হওয়া উচিত। তবে এই বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এটি সঙ্কুচিত হয়ে ১৯% দাঁড়িয়েছে।
খবরে জানা যায়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে দীর্ঘদিন হতে। কারণ ২০১৬ সাল থেকে দেশীয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আর বাড়ানো হয় নাই বরং একই জায়গায় আটকে আছে।তাছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ফলে কনজারভেটিভ সরকার যুক্তরাজ্যের রাজস্বের প্রধান উৎসকে আঘাত করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার কারণে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার চাপে রয়েছে বলে জানা যায়। জরিপে দেখা গেছে যে ৬১% উত্তরদাতারা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতের জন্য সরকারকে দোষ দেন এবং ২৯% বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দানকারী নেতাদের দোষ দেন।
উচ্চশিক্ষা নীতি ইনস্টিটিউটের (এইচপিআই) পরিচালক নিক হিলম্যান বলেছেন, “ আমাদের জীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সম্পর্কে জনগণের অবশ্যই একটি স্পষ্ট উপলব্ধি রয়েছে। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন নতুন রোগের মোকাবেলা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে গবেষণার বিকল্প নেই।”
এইচপিআই গবেষণায় দেখা যাত, শেফিল্ড সেন্ট্রাল, লিডস সেন্ট্রাল এবং হেডিংলি সহ যে সকল অঞ্চলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রয়েছে সেইসব অঞ্চলে ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন করেছে।
তবে কেসিএল সমীক্ষায় দেখা গেছে রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের দিক থেকে ভোটাররা উচ্চ শিক্ষাকে খুব কম গুরুত্ব দিয়েছেন। মাত্র ১৩% বলেছেন কীভাবে ভোট দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষাকে “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” বলে মনে করেন তারা। যেখানে ৬৫% মনে করেন এনএইচএস সার্ভিস একটি প্রধান উপাদান ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে।
গবেষণার পক্ষে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে ৭৪% লোক। যেখানে চিকিৎসা, প্রযুক্তি এবং সামাজিক উদ্ভাবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করে। মাত্র ১৮% লোক মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত বেশিরভাগ গবেষণাই সময় নষ্ট।
উল্লেখ্য যে, উচ্চশিক্ষা খাত কনজারভেটিভ সরকার কর্তৃক চাপের মধ্যে রয়েছে। ঋষি সুনাক নিম্নমানের ডিগ্রিগুলির উপর ক্র্যাকডাউনের জন্য চাপ দিয়েছেন। কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে “নিম্ন-মানের” কোর্সগুলি বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এবং স্কুল ত্যাগকারী শিক্ষার্থীদের এপ্রেন্টিশিপের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২০ জুন ২০২৪