বিদেশে পাঠানোর কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডি। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে তোলা হলে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা ডিম ছুঁড়ে প্রতিক্রিয়া জানান।
সোমবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সকাল থেকেই দুই শতাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আদালত চত্বরে উপস্থিত হয়ে ‘বাশারের বিচার চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
দুপুরে যখন বাশারকে আদালতের হাজতখানা থেকে বের করে আদালত কক্ষে নেওয়া হচ্ছিল, তখন কড়া পুলিশ পাহারার মধ্যেও বিক্ষুব্ধ জনতা ডিম ছুঁড়ে মারেন। এসব ডিম গিয়ে লাগে খায়রুল বাশারের মাথা ও পুলিশ সদস্যদের গায়েও।
আদালতে তোলা হলে বিচারক খায়রুল বাশারকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি শত শত শিক্ষার্থীকে প্রতারণা করলেন কীভাবে? এরা তো আপনার সন্তানতুল্য!’ জবাবে বাশার বলেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার।’ তবে কী পরিস্থিতি, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি। আদালত আরও জানতে চান, তার নামে কয়টি মামলা আছে। বাশার জানান, তার নামে ৭০টি মামলা রয়েছে।
সিআইডির পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খায়রুল বাশার ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর নাম করে অন্তত ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী সিআইডিকে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা হাজারের বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে তদন্ত সংস্থা।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘বাশার এক হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। টাকা ফেরত দেওয়ার নাম করে দিয়েছেন বাউন্স হওয়া চেক। যারা টাকা ফেরত চাইতে গেছেন, তাদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাশার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বহুদিন ধরে এসব কাজ করে আসছিলেন। আদালতে শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রীদের সঙ্গে তোলা তার কিছু ছবিও উপস্থাপন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত এক আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি খায়রুল বাশারের দ্বারা প্রতারিত হয়েছি। এই আদালতে বিচার চেয়ে মামলাও করেছি। আমার মতো আরও ৭০ থেকে ৮০ জন এই আদালতে খায়রুল মাশারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমার ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।’
ভুক্তভোগী নাঈম হাওলাদার বলেন, ‘আমাকে কানাডায় পাঠানোর কথা বলে খায়রুল বাশার ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমার বাবা সুদে টাকা এনে দিয়েছিলেন। আজও সেই ঋণের টাকা শোধ করছি। বিদেশে যাওয়াও হলো না, টাকাও ফেরত পাইনি।’
রাষ্ট্রপক্ষ খায়রুল বাশারের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এ সময় আদালত মন্তব্য করেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে এত মামলা, আপনার জীবন তো জেলেই কেটে যাবে।’ আদালতের আদেশের পর বাশারকে ফের হাজতখানায় নেওয়ার সময়ও ভুক্তভোগীরা ‘শিক্ষা প্রতারকের বিচার চাই’ স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এম.কে
১৫ জুলাই ২০২৫