5.6 C
London
December 27, 2024
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

আফ্রিকায় শীর্ষ বিনিয়োগকারী আরব আমিরাত

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতসহ নতুন নতুন ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিয়ে আফ্রিকায় শীর্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকায় বিনিয়োগে আধিপত্য দেখানো চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে টপকে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।

ব্রিটেন, ফ্রান্স বা চীনের মতো দেশগুলো আফ্রিকায় বড় বড় প্রকল্পে প্রত্যাশিত মুনাফা না পাওয়ায় বিনিয়োগ থেকে পিছুটান দিয়েছে গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগ ইতিবাচক হলেও শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আরব আমিরাতের কোম্পানিগুলো আফ্রিকায় ১১০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে কেবল নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেই ৭২ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক ব্রিটেন, ফ্রান্স বা চীনের মতো দেশগুলোর বিনিয়োগের দ্বিগুণ।

আমিরাতের বিনিয়োগকে আফ্রিকান নেতারা স্বাগত জানালেও শ্রমিক অধিকারের প্রতি সংবেদনশীলতা ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্লেষেকরা।

ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক বা গবেষণা সংস্থা চ্যাথাম হাউসের সহযোগী ফেলো আহমেদ আবুদু বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে জ্বালানি রূপান্তরের জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন। আমিরাতি বিনিয়োগকারীরা এই শূন্যতা পূরণ করছে। যেখানে পশ্চিমা দেশগুলো ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমিরাতিরা পশ্চিমাদের তুলনায় শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে কম গুরুত্ব দেয়— এটা আফ্রিকার জন্য উদ্বেগের।

আফ্রিকার কৃষি ও টেলিকম খাতেও বিনিয়োগ করেছে আমিরাতের কিছু কোম্পানি। আর দুবাইয়ের রাজপরিবারের এক সদস্য জিম্বাবুয়ে, লাইবেরিয়া, জাম্বিয়া ও তানজানিয়ার বনাঞ্চল কিনে কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো থেকে প্রকৃতি সংরক্ষণ প্রকল্পে কার্বন ক্রেডিট নামে বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করছেন।

এসব প্রকল্পের কোনোটা এখনো চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যেমন—২০২৩ সালে মৌরিতানিয়ায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’ প্রকল্প। আর কিছু বিনিয়োগ আর্থিক সমস্যার কারণে বাধার মুখে পড়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকায় মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর খেলোয়াড় হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আরব আমিরাত। দেশটির বিরুদ্ধে লিবিয়া ও সুদানে সংঘাত উসকে দেওয়ার অভিযোগ আছে। যদিও তেল ও গ্যাসনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে সবুজ জ্বালানি, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ কপার খাতের ঝুঁকছে দেশটি।

আফ্রিকায় আমিরাতের প্রথম দিককার বিনিয়োগকারীর ছিল দুবাইয়ের এয়ারলাইনস ও বন্দর কোম্পানিগুলো। দেশটির এমিরেটস এয়ারলাইনস আফ্রিকার ২০টি দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এ ছাড়া আফ্রিকার বন্দরগুলোতেও আমিরাতের আধিপত্য আছে। দুবাইয়ের রাজপরিবারের মালিকানাধীন বহুজাতিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ ২০০৬ সাল থেকে এই অঞ্চলে সক্রিয়। আফ্রিকায় ছয়টি বন্দর পরিচালনার সঙ্গে দুটি বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি। আবুধাবি পোর্টস ২০১৩ সাল থেকে গিনির কামসার বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে আছে। সম্প্রতি মিশর, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও অ্যাঙ্গোলাতেও নতুন প্রকল্প পেয়েছে এই কোম্পানি।

আমিরাতের বিনিয়োগ আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সুযোগ হলেও বিনিয়োগের আইন ও শ্রম অধিকার পরিপালনে কড়া নজরদারি জরুরি বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক কেন ওপালো বলেন, আফ্রিকান দেশগুলো তাদের প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও বাণিজ্যের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। তবে এই মনোভাব অপরাধ প্রবণতাও বাড়াতে পারে, যেমনটা আমরা স্বর্ণ খাতের ক্ষেত্রে দেখেছি।

গবেষণা বলছে, আফ্রিকা থেকে দুবাইয়ে অবৈধভাবে স্বর্ণ পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। সুইসএইড নামে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আমিরাতে যাওয়া স্বর্ণের হিসাবে বড় গড়মিল ধরা পড়েছে। রপ্তানি ও আমদানি বিবেচনায় দুই প্রান্তের হিসাবে ২ হাজার ৫৬৯ টনের স্বর্ণের পার্থক্য ধরা পড়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত বাশারকে ডিভোর্স দিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান স্ত্রী

নতুন সাবস্ক্রাইব ব্যবস্থা চালু করছে স্যোশাল মিডিয়া সাইট এক্স

মালদ্বীপ থেকে সৈন্যদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে ভারত