আধুনিক আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে বুরকিনা ফাসোর মাত্র ৩৫ বছর বয়সী সেনানায়ক ইব্রাহিম ত্রাউরে সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের আগ্রদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন—ফ্রান্সপন্থী পূর্ববর্তী শাসকের ব্যর্থতা ও দেশজুড়ে জিহাদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে পুঁজি করে।
ত্রাউরে আফ্রিকার বিখ্যাত বিপ্লবী নেতা টমাস সাংকারার আদর্শ ও ভাবনাকে জীবন্ত রেখে জাতীয় মর্যাদা, স্বনির্ভরতা ও উপনিবেশবাদবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তিনি বুরকিনা ফাসো থেকে ফরাসি সেনা প্রত্যাহার করেন, সাহেল অঞ্চলের অন্যান্য দেশ—মালি ও নাইজারের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে মিলে ‘সাহেল রাষ্ট্রজোট’ গঠন করে ফ্রান্স ও পশ্চিমাদের প্রভাবকে প্রতিহত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
ত্রাউরের এই নেতৃত্ব শুধু সামরিক নয়, জনগণকে সম্পৃক্ত করে নিরাপত্তা ও শাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। আফ্রিকার এই নবীন সামরিক নেতৃত্ব রাশিয়া ও চীনের সহায়তায় পশ্চিমাদের একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিকল্প রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। যদিও এ নতুন মিত্রদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তবে সাহেল অঞ্চলের জনগণের সমর্থন ত্রাউরের পক্ষে রয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশেও তরুণ নেতৃত্বের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ব্যক্তিস্বার্থ, অভিজ্ঞতার অভাব, রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্থিতিবন্ধকতা এবং জনমতের সঙ্গে দূরত্ব বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বকে পিছিয়ে রেখেছে। যেখানে ত্রাউরে জাতীয় স্বার্থ, স্বচ্ছতা ও জনগণকে কেন্দ্র করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বাংলাদেশে অনেক সময় রাজনীতিতে ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল হিসেবে পুরোনো রাজনীতির পুনরাবৃত্তি ঘটে।
আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের পরিবর্তন আমাদের শেখায়—নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব হতে হলে প্রয়োজন স্পষ্ট আদর্শ, জনগণের বিশ্বাস অর্জন এবং স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। বাংলাদেশের তরুণদের জন্য এটি একটি সুযোগ, যেটি কাজে লাগাতে পারলেই দেশ রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
তবে এটা সহজ কাজ নয়। আফ্রিকার সামরিক জোটের মতো কাঠামোর বদলে, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ নেতৃত্বের বিকল্প প্রতিষ্ঠাই বাংলাদেশের তরুণদের চ্যালেঞ্জ। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
ত্রাউরের উদাহরণ আমাদের সামনে দেখাচ্ছে, নতুন প্রজন্ম ক্ষমতা ও দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে যদি তারা ঐতিহ্য থেকে শিক্ষা নিয়ে আধুনিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়। বাংলাদেশও যদি এই পাঠ গ্রহণ করতে পারে, তবে দেশের যুবসমাজ সত্যিকারের নেতৃত্বের উদ্ভব ঘটাতে পারতো।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
১০ জুন ২০২৫