বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম ভ্লাদিমির পুতিন। টানা ২৫ বছর বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার ক্ষমতার মসনদ ধরে রেখেছেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির তকমাও পেয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জিতে আবারও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রাশিয়ার এই একচ্ছত্র নেতা।
৭ মে মঙ্গলবার ৫ম বারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসের সুসজ্জিত সেইন্ট অ্যান্ড্রিউ হলে তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এর মাধ্যমে ২০৩০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার ক্ষমতা নিশ্চিত করলেন তিনি।
পুতিনের বর্তমান বয়স ৭১ বছর। ২০৩০ সালে তার বয়স দাঁড়াবে ৭৭ বছরে। একই সময়ে রাশিয়ার ক্ষমতাসীন হিসেবে তার ৩০ বছর পেরিয়ে যাবে।
১৯৯৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ভ্লাদিমির পুতিন । পরে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিনের বদন্যতায় ১৯৯৯ সালে প্রথমাবরের মতো রাশিয়ার অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ওই বছর পুতিনের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে রাজনীতি থেকে অবসরে গিয়েছিলেন ইয়েলেৎসিন।
পরে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতেন পুতিন। ২০০৪ সালের নির্বাচনে ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হন।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ার সংবিধানেও কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকার অনুমতি ছিল না। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজের বিশ্বস্ত অনুসারী দিমিত্রি মেদভেদেভকে তিনি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান এবং নিজে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হন। সেই নির্বাচনে মেদভেদেভ এবং পুতিন উভয়ই জয়ী হয়েছিলেন।
কিন্তু ২০১২ সালের নির্বাচনে ফের জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল ৪ বছর থেকে ৬ বছরে উন্নীত করেন এবং দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা না করার যে বাধ্যবাধকতা ছিল— তা বাতিল করেন। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি।
রাশিয়ায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রেসিডেন্টের পদে থাকার রেকর্ডের মালিক সাবেক সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন। টানা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। শপথগ্রহণের পর এবারের মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারলে স্ট্যালিনকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হবেন পুতিন।
ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে ইউক্রেন স্বীকৃতি না দেওয়ায় প্রায় ৪-৫ বছর দেশটির সঙ্গে টানাপোড়েন শেষে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন পুতিন।
সেই অভিযান এখনো চলছে। এদিকে অভিযান শুরুর পরপরই রাশিয়ার উপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
যদি সত্যিই এ উদ্দেশ্য সফল হতো, তাহলে পুতিনের পক্ষে এই নির্বাচনে জেতা খুবই কঠিন হতো। কিন্তু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিভিন্ন নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাব্য সেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়া। আর এই ব্যাপারটিই পুতিনের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে।
পুতিন কতদিন রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকতে চান সে ব্যপারে তিনি নিজে বা রুশ কর্মকর্তারা কখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটা নিশ্চিত। সর্বশেষ নির্বাচনের ঠিক আগে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে পুতিনই দেশের হাল ধরে রাখতে পারেন। তবে এটা ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন একটি পরিস্থিতি।
যুদ্ধ শেষ হলে এবং পুতিন রাশিয়াকে নিরাপদ মনে করলে, সর্বোপরি পুতিন ইচ্ছে করলে আগামীতে অন্য কাউকে তিনি রাশিয়ার রাজনীতির দৃশ্যপটে আনতে পারেন।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
০৮ মে ২০২৪