যুক্তরাজ্যে আশ্রয় ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের অংশ হিসেবে আশ্রয়প্রার্থীদের গয়না বা অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী জব্দ করে প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয়ের অংশ আদায় করার প্রস্তাব দিয়েছে হোম অফিস। মন্ত্রী অ্যালেক্স নরিস বলেছেন, আবেগঘন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গয়না নয়, তবে উচ্চমূল্যের অলঙ্কার বা সম্পদকে সরকার খরচের বিপরীতে ব্যবহার করতে পারে। ডেনমার্কের কড়াকড়ি নীতির অনুসরণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
হোম অফিসের এই প্রস্তাবকে ঘিরে লেবার পার্টির একাধিক এমপি ও মানবাধিকার সংস্থা তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ধারণা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং সরকারের মানবিক দায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কিছু লেবার এমপি এমনকি সরকারের এই কঠোর অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্ত্রীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ব্রিটিশ করদাতারা বছরে বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করছেন আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন ও ভাতা বাবদ। তাই যাদের ব্যাংকে অর্থ, গাড়ি, ই-বাইক বা মূল্যবান সম্পদ আছে তাদের এসব সম্পদ ব্যয়ের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা “ন্যায়সঙ্গত” বলে তিনি মনে করেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন “বর্ডারে কারও উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কোনো অলঙ্কার” সরকারের লক্ষ্য নয়।
হোম অফিস সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তে গয়না বাজেয়াপ্ত করা হবে না, কিন্তু যাদের কাছে বড় পরিমাণ উচ্চমূল্যের অলঙ্কার থাকবে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যয়ের অংশ হিসেবে এগুলো বিবেচনায় আনা হতে পারে। সমালোচকদের মতে, এই নীতি কার্যত শরণার্থীদের মানসিক চাপে ফেলবে এবং তাদের বিপন্ন অবস্থাকে আরও কঠিন করবে।
সরকার আরও জানিয়েছে, যে সব দেশ প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত নিতে সহযোগিতা করছে না, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা সীমাবদ্ধতাসহ কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো হবে। অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রসহ কয়েকটি দেশকে সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, যেসব শরণার্থীর উৎস দেশ আর বিপজ্জনক বিবেচিত নয়, তাদের অবস্থান প্রতি ৩০ মাসে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। সমালোচকদের মতে, এটি শরণার্থীদের অনিশ্চয়তার মাঝে দীর্ঘমেয়াদি “লিম্বো” অবস্থায় রাখবে এবং একীকরণকে অসম্ভব করে তুলবে।
সরকার ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন (ECHR)–এর অধীনে পরিবার-জীবন সংক্রান্ত ধারা কঠোরভাবে প্রয়োগের আইন আনতেও উদ্যোগী হয়েছে, যাতে ব্রিটেনে পরিবার থাকা সত্ত্বেও আরও বেশি মানুষকে বহিষ্কার করা যায়। তবে বিরোধী দল ও মানবাধিকার কর্মীদের দাবি—এই ধারার অপব্যবহার খুব সামান্য এবং পুরো ব্যবস্থায় এটির প্রভাবও সীমিত।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের মতে, “পরিবারের স্মৃতিমূলক সম্পদ কেড়ে নেওয়া” কোনোভাবেই একটি ভেঙে পড়া আশ্রয় ব্যবস্থা মেরামতের উপায় হতে পারে না। তারা বলছে, প্রতিদিন ৬ মিলিয়ন পাউন্ড হোটেল ব্যয় কমাতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে হবে, আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর কঠোরতা নয়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

