4 C
London
February 10, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

আ.লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন

সাবেক স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন অভিযোগের গুরুতর প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন। তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার গণআন্দোলন দমনে নৃসংশ পন্থা অবলম্বনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আ. লীগ সরকার প্রত্যক্ষ ইন্ধন দিয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই তদন্তের ১০০ পৃষ্ঠার বেশি প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে জাতিসংঘ। সরকারের নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে নিজেদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের (তদন্ত কমিশন) একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠায় জাতিসংঘ। ওই সময় সরকারের কাছ থেকে এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে সেটি দেওয়া হয়। এরপরই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে জাতিসংঘ।

প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে সরকারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের নৃশংসতায় বিগত সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধন পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন। বিশেষ করে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে কিছু কিছু ঘটনা লোকমুখে শোনা বা পুরোপুরি তথ্য-উপাত্ত প্রদান না করতে পারায় তদন্ত কমিশন পুনরায় ওইসব ঘটনাবলি তদন্ত করার পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে জুলাই-আগস্টে কী কী ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এই প্রতিবেদনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরত্বসহকারে এসেছে। এতে আবু সাঈদের মারা যাওয়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ যে আবু সাঈদকে গুলি করছে এবং গুলিতে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, এমন ছবি খুব কাছ থেকে জুম করে দেখানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশের গুলির সময়ে তার কাছে যে কোনো অস্ত্র ছিল না সেটিও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘গুলি করার পরও মানুষ সরে যায় না’ বলতে শোনা ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভিডিও, রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে পুলিশের নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারার দৃশ্য প্রতিবেদনে  উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে জুলাইয়ের বেশ কিছু ঘটনার জন্য সরেজমিনে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া ছাদ থেকে শিক্ষার্থীদের ফেলে দেওয়ার একটি ঘটনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সরকারের এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, “ বিগত সরকারের ওপর জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার দায় যাচ্ছে। আগের সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে সেটি প্রতিবেদনে আছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে যেসব তথ্য ও প্রমাণ পেয়েছে সেগুলো জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনকে দিয়েছে। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ এবং তদন্ত কমিশন যেসব সাক্ষাৎকার নিয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা। আমাদের দেওয়া এবং তাদেরটা মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের ওপর ভীত্তি করে প্রতিবেদন হয়েছে। প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্টে কি কি ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো প্রয়োজনে পুনরায় তদন্ত করার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ।”

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই ও আগস্টের শুরুতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি লেখেন।

পরবর্তী পদক্ষেপে তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা সফর করেন। এরপর তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের মূল দল তথা তথ্যানুসন্ধান দল এক মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গত জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে। তদন্তের স্বার্থে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করেছে।

এম.কে
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

ভোটার হতে গিয়ে পাগলের তালিকায়

ড. ইউনুস টিউলিপ সিদ্দিকের কেলেঙ্কারির বিষয়েঃ “এটি সরাসরি ডাকাতি”

যুক্তরাজ্যে সাংসদদের কর্তৃক বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সম্পর্কে সমালোচনা করা রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান