20 C
London
September 16, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ঠেকাতে লন্ডনের সঙ্গে চুক্তি চায় প্যারিস

ফ্রান্সের সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা ইংলিশ চ্যানেলে চলমান গুরুতর অভিবাসন সংকট নিয়ে যুক্তরাজ্যের সাথে নতুন চুক্তির আহবান জানিয়েছেন৷ মঙ্গলবার চ্যানেলে নৌকা ডুবে ১২ অভিবাসী নিহতের ঘটনার পর এমন প্রসঙ্গ সামনে এনেছেন তিনি৷

২০২১ সাল থেকে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ইংলিশ চ্যানেলে ছোট ‘নৌকার’ যাত্রা ঠেকাতে নতুন চুক্তির আহ্বান জানাল প্যারিস৷

মঙ্গলবার ৩ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ নৌকাডুবির পর তাৎক্ষণিক উত্তর ফ্রান্সের বুলন-সুর-মের অঞ্চল সফরে গিয়েছিলেন সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা৷ তিনি ২০২০ সাল থেকে চ্যানেলে পাচারকারীদের মোকাবিলায় একটি সমাধান খুঁজে বের করা এবং অভিবাসীদের চ্যানেল পার হতে অনুৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন৷ যদিও এসব চেষ্টা বৃথা গেছে৷

অভিবাসনের মতো জটিল বিষয়ে লন্ডনের সঙ্গে নতুন করে চুক্তির ঘটনা এটি প্রথম নয়৷ এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে চার বছরের জন্য ব্রিটেনের সাথে ৫০০ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি অর্থের বিনিময়ে পারষ্পরিক সহযোগিতার একটি চুক্তি সই হয়েছিল৷

বিশেষ করে উত্তর ফ্রান্সের কালে উপকূলকে আরো বেশি সামরিকীকরণ করে সমুদ্রে অভিবাসীদের যাত্রা বন্ধ করতে এই অর্থ খরচ করার জন্য একমত হয়েছিল দুই প্রতিবেশী৷

ফলে ফরাসি সমুদ্র সৈকতে শত শত অতিরিক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন এবং স্থল বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য আরো বেশি নজরদারি ড্রোন সরবরাহ করা হয়৷ এই চুক্তিতে উচ্চ-প্রযুক্তিগত নজরদারি সরঞ্জাম (দূরবীন, তাপীয় ক্যামেরা) স্থাপন এবং ব্যবহারের বিধানও যুক্ত করা হয়েছিল৷

কিন্তু এসব কিছুই অভিবাসীদের থামাতে পারেনি৷ অবশেষে জেরাল্ড দারমানা মঙ্গলবার স্বীকার করেছেন, ‘‘কোনো কিছুই অভিবাসীদের নিজ পরিবারের সঙ্গে বসবাস করার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিহত করতে পারে না৷ ফরাসি সমুদ্র সৈকতে নজরদারি বাহিনী থাকা সত্ত্বেও ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ প্রতিরোধ নীতি তেমন কাজ করেনি৷’’

২০২৪ সালে চ্যানেলে অভিবাসী মৃত্যুর সংখ্যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ ব্রিটিশ হোম অফিস বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৪০০ অভিবাসী ব্রিটিশ উপকূলে পৌঁছেছেন৷ ২০২৩ সালের একই সময়ে এই সংখ্যাটি ছিল ২১ হাজার৷

দারমানা বলেন, “এটি কয়েক মিলিয়ন ইউরোর ব্যাপার নয় যে আমরা প্রতি বছর আমাদের ব্রিটিশ বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারব। অভিবাসীদের গোপন প্রস্থান ঠেকাতে আমরা যা ব্যয় করি তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ ব্রিটেন দেয়৷’’

সাবেক এই মন্ত্রী স্বীকার করেছেন, অভিবাসীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফরাসি মাটিতে তাদেরকে আটকে রাখার প্রয়াস অসম্ভব৷ উত্তর ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যেতে অপেক্ষারত অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে পাঁচ শতাংশেরও কম ব্যক্তি ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন করেন৷ এই লোকেরা মূলত উপকূল থেকে প্রায়শই তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে চায়৷ কোনো কিছুই তাদের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করার এই ইচ্ছাকে প্রতিহত করতে পারে না৷’’

এই সাবেক ফরাসি মন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন, “এটি আংশিকভাবে সত্য যে ইইউ দেশগুলোতে অনিয়মিত অভিবাসীদের বহিষ্কার নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ডাবলিন বিধিমালা চ্যানেলজুড়ে প্রযোজ্য নয়৷ আমরা আসলে, যুক্তরাজ্যে আসা একজন অভিবাসীকে ফ্রান্সে বা ইইউতে ফেরত পাঠাতে পারি না৷ কারণ এ অঞ্চলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি অংশের কোনো সাধারণ অভিবাসন নীতি নেই৷’’

তাহলে মানুষকে এসব ভয়ংকর পারাপার থেকে বিরত রাখার সমাধান কী? ফরাসি সরকারের মতে, এটি সুস্পষ্টভাবে একটি ইউরোপীয় বিষয়৷ এটি শুধু ফ্রান্সের উপর নির্ভর করে না৷

দারমানা বলেন, “আমরা আলোচনা করতে চাই, এবং দুই বছরেরও বেশি আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে বলেছিলেন, একটি ইউরোপীয় অভিবাসন চুক্তি এর সমাধান করতে পারে৷’’

দারমানা যোগ করেন ,‘‘কিয়ার স্টারমারের নতুন ব্রিটিশ সরকার ইইউ এর সঙ্গে পুনরায় ব্রিটেনের সম্পর্ক শুরুর কথা বলেছেন৷ আমি অধীর আগ্রহে এটির জন্য অপেক্ষা করছি৷ কারণ নীতি পরিবর্তন না হলে ফরাসি পুলিশ এবং জন্দামেরির সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনিয়মিত পারাপার বন্ধ করতে পারব না৷’’

এনজিওগুলোর পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে৷ তারা বছরের পর বছর ধরে নিরাপদ অভিবাসন রুট ও আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির উপর জোর দিয়ে আসছে৷

অভিবাসন সংস্থা ইতুপিয়া ৫৬ এর মুখপাত্র বলেন, “চ্যানেলে বর্তমান নীতি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর। এগুলো বারবার দুর্ঘটনা এবং নৌকাডুবির দিকে নিয়ে যায়।”

ব্রিটিশ সংস্থা রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান এনভার সলোমন বলেন, “বিশেষ করে যারা আফগানিস্তান, সিরিয়া বা সুদান থেকে এসে সুরক্ষা চাইছেন তাদের জন্য বৈধ প্রবেশাধিকার উন্নত করা উচিত৷’’

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

ইউরোপ একটি বিপজ্জনক মুহূর্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে: বরিস জনসন

হাসপাতালে ভর্তি ওয়েলসের রাজকুমারী কেট মিডলটন

বেনিফিট বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করতে গিয়ে নতুন কেলেঙ্কারির জন্ম দিতে পারে সরকার