ইংল্যান্ডে হোটেল ও এয়ারবিএনবি–ধরনের আবাসনে রাত্রীযাপনের ওপর অতিরিক্ত কর বা ‘হলিডে ট্যাক্স’ চালুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী সপ্তাহে চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস বাজেটে এই প্রস্তাব আনতে পারেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের মেয়রদের পর্যটকদের কাছ থেকে রাত্রীকর আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হবে।
নতুন কর কার্যকর হলে মেয়রদের বছরে কয়েকশো মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত রাজস্ব আয় সম্ভব হবে, যা পরিবহন উন্নয়ন, অবকাঠামো প্রকল্প ও জনসেবা খাতে ব্যয় করা যাবে। তবে আতিথেয়তা খাত বলছে, এমন সিদ্ধান্ত ভ্রমণ ব্যয় বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি আরও ত্বরান্বিত করবে।
UKHospitality জানিয়েছে, স্কটল্যান্ডের এডিনবরাতে কার্যকর হতে যাওয়া ৫% পর্যটন কর ইংল্যান্ডে প্রয়োগ হলে বাস্তবে ভোক্তাদের ওপর ২৭% পর্যন্ত মোট করের চাপ সৃষ্টি হবে। হোটেল ভাড়ার ২০% ভ্যাটের পাশাপাশি নতুন করের ওপরও ভ্যাট আরোপিত হবে বলে উল্লেখ করে তারা সতর্ক করেছে যে, এতে শুধু ব্রিটিশ ভ্রমণকারীদেরই অতিরিক্ত ৫১৮ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হবে।
সংগঠনের চেয়ার কেট নিকলস বলেন, “জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন বললেও এই হলিডে ট্যাক্স মূলত পর্যটকদের ওপর বাড়তি ভ্যাট চাপানোর সমান।” তিনি জানান, ব্রিটিশরা বছরে ৮৯ মিলিয়নের বেশি রাত্রীভিত্তিক ভ্রমণ করেন এবং মোট ২৫৫ মিলিয়ন রাত ইংল্যান্ডে থাকেন — ফলে নতুন করের চাপ প্রায় সবাইকেই বহন করতে হবে।
সরকারি সূত্র জানায়, পর্যটন কর না থাকা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ড এখনো ব্যতিক্রম। স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস ইতোমধ্যে ট্যুরিস্ট লেভি চালুর পথে। সংশ্লিষ্ট পরিবর্তনগুলো আনা হবে “ইংলিশ ডেভলুশন অ্যান্ড কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট বিল”-এ সংশোধনের মাধ্যমে, যা বর্তমানে পার্লামেন্টে রয়েছে।
ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের মেয়ররা দীর্ঘদিন ধরে এই লেভির দাবি জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এবং গ্রেটার ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যামসহ একাধিক মেয়র সরকারকে চিঠি দিয়ে বলেন, গ্রেটার ম্যানচেস্টারে £১ থেকে £৫ রাত্রীকর আরোপ করা হলে বছরে £৮ মিলিয়ন থেকে £৪০ মিলিয়ন তোলা সম্ভব। এসব টাকা ওল্ড ট্র্যাফোর্ড পুনর্গঠন বা বিমানবন্দর উন্নয়নের মতো প্রকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেন।
স্কটল্যান্ডে আগামী জুলাই থেকে ৫% ট্যুরিস্ট ট্যাক্স চালুর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ওয়েলসেও ২০২৭ সাল থেকে অধিকাংশ আবাসনে প্রতি ব্যক্তি প্রতি রাতে £১.৩০ কর আরোপের প্রস্তুতি চলছে।
এ ছাড়াও ২৬ নভেম্বরের বাজেটে ‘মিল্কশেক ট্যাক্স’ চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। দুধ–ভিত্তিক পানীয়কে এখন যে সুগার ট্যাক্স থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেটি তুলে নিয়ে উচ্চ-চিনি পানীয়ের ওপর কর আরোপ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। চিনি-সমৃদ্ধ সফট ড্রিংকসে বর্তমানে লিটার প্রতি অন্তত ১৮ পেনি কর আদায় করা হয়; নতুন নিয়মে এটি আরও বাড়তে পারে।
ট্রেজারি বলেছে, বাজেট সম্পর্কিত গুঞ্জনে তারা মন্তব্য করে না। তবে চলতি মাসের বাজেটে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, জাতীয় ঋণ হ্রাস এবং স্বাস্থ্যসেবার অপেক্ষমান তালিকা কমানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

