TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ মালিকানা নিয়ে মেটার বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার শুনানি শুরু

ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করে অবৈধভাবে সামাজিক মাধ্যমের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে—এমন অভিযোগে ওয়াশিংটনে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ মামলার শুনানি সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে।

মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) দাবি করেছে, এক দশকেরও বেশি আগে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণের মাধ্যমে ফেসবুক সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে চেয়েছে। মামলাটি প্রথম ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে দায়ের করা হয়েছিল।

FTC চায় মেটা যেন ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপসহ তার ব্যবসার কিছু অংশ বিক্রি করে অথবা পুনর্গঠন করে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এটি FTC-র প্রথম বড় পরীক্ষা। মামলার সূত্রপাত ট্রাম্পের আগের মেয়াদে হওয়া তদন্ত থেকেই।

মেটার চিফ লিগ্যাল অফিসার জেনিফার নিউস্টেড এই মামলাকে দুর্বল এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে বাধা হিসেবে আখ্যা দেন। এক ব্লগপোস্টে তিনি লেখেন,
“এটা হাস্যকর যে, প্রশাসন যখন চীনা মালিকানাধীন টিকটককে রক্ষা করতে চায়, তখন FTC এক মহান আমেরিকান কোম্পানিকে ভাঙার চেষ্টা করছে।”

এই মামলাটি মেটার জন্য অস্তিত্বগত হুমকি হতে পারে, কারণ বিভিন্ন অনুমান অনুযায়ী মার্কিন বিজ্ঞাপন আয়ের প্রায় অর্ধেকই আসে ইনস্টাগ্রাম থেকে।

ইমার্কেটার-এর প্রধান বিশ্লেষক জেসমিন এনবার্গ বলেন,
“ইনস্টাগ্রাম হারানো মেটার জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় হবে। এটি ভবিষ্যতের ব্যবহারকারী এবং আয় বৃদ্ধির পথেও বড় ধাক্কা দেবে। ২০২৫ সালে ইনস্টাগ্রাম একাই মেটার মার্কিন বিজ্ঞাপন আয়ের ৫০.৫% জোগান দেবে।”

মেটা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি সদয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রিপাবলিকানদের অপছন্দ করা কিছু কনটেন্ট মডারেশন নীতি বাতিল করেছে এবং ট্রাম্পের অভিষেকে $১ মিলিয়ন দান করেছে। মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ হোয়াইট হাউসে রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সাথে একাধিকবার দেখা করেছেন। সম্প্রতি তিনি ডিসিতে $২৩ মিলিয়নের একটি বাড়ি কিনেছেন যাতে নীতিমালাভিত্তিক কার্যক্রমে বেশি সময় দিতে পারেন—এমনটাই জানিয়েছে মেটার একজন মুখপাত্র।

FTC মুখপাত্র জো সাইমনসন বলেন,
“ট্রাম্প-ভ্যান্স FTC এই মামলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের আইনজীবীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং বুদ্ধিমান।”

জাকারবার্গ এই মামলায় সাক্ষ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে তাকে এমন ইমেইল নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যাতে তিনি ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন একটি প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিরস্ত করতে এবং হোয়াটসঅ্যাপকে সম্ভাব্য সামাজিক নেটওয়ার্ক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।

মেটা আদালতে দাবি করেছে, ২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম এবং ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয়ায় ব্যবহারকারীদের উপকার হয়েছে এবং বর্তমান প্রতিযোগিতা যেমন টিকটক, ইউটিউব ও অ্যাপলের মেসেজিং অ্যাপের প্রেক্ষাপটে আগের মন্তব্যগুলোর প্রাসঙ্গিকতা নেই।

এই মামলার মূল বিষয় হবে—মানুষ কীভাবে সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটায় এবং তারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মকে একে অপরের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করে কিনা।

FTC দাবি করেছে, মেটা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত প্ল্যাটফর্মে একচেটিয়া ক্ষমতা ধরে রেখেছে। তাদের প্রধান প্রতিযোগী যুক্তরাষ্ট্রে স্ন্যাপচ্যাট ও MeWe। অন্যদিকে X, টিকটক, ইউটিউব ও রেডিটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে FTC বিকল্প হিসাবে মনেভকরে না।

ফরেস্টার-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক প্রোলক্স বলেন,
“এই মামলার পরিণতি এবং টিকটকের অনিশ্চয়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গোড়া কেঁপে উঠতে পারে। মেটা আর কেন্দ্রবিন্দু থাকবে না। এমন পরিবর্তন আমরা ২০০৬-২০১১ সালের পর আর দেখিনি।”

মার্কিন জেলা বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ গত নভেম্বর মাসে রায় দেন, FTC মামলাটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছে, তবে শুনানিতে তাদের দাবি কতটা টিকবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

FTC-এর সাবেক চেয়ার লিনা খান বলেন, মেটা “বাই-অর-বেরি” (অধিগ্রহণ করো না হয় শেষ করে দাও) কৌশল নিয়েছে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কিনে নিয়েছে বা তাদের ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এনবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
“আজকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেহারা ভিন্ন হতো যদি ফেসবুককে এই অধিগ্রহণ করতে না দেওয়া হতো।”

এই শুনানি জুলাই পর্যন্ত চলতে পারে। FTC যদি জয়ী হয়, তাহলে তাদের দ্বিতীয় এক শুনানিতে প্রমাণ করতে হবে যে ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিযোগিতা ফিরে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইনস্টাগ্রাম হারানো মেটার রাজস্বে বড় ধাক্কা দিতে পারে। ইমার্কেটার অনুমান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ইনস্টাগ্রাম মেটার জন্য $৩৭.১৩ বিলিয়ন আয় আনবে—যা মেটার মার্কিন বিজ্ঞাপন আয়ের অর্ধেকের বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপ এখনও পর্যন্ত মেটার সামগ্রিক আয়ে খুব কম অবদান রাখেছে, তবে দৈনিক ব্যবহারকারীর দিক থেকে এটি মেটার সবচেয়ে বড় অ্যাপ। বর্তমানে চ্যাটবটসহ নানা টুল থেকে আয় বাড়াতে কাজ করছে মেটা। জাকারবার্গ বলেছেন, এই ধরনের “বিজনেস মেসেজিং” ভবিষ্যতে মেটার নতুন প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হতে পারে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৫ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

চুরির অভিযোগ, পদত্যাগ করলেন নিউজিল্যান্ডের এমপি

গাজায় ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মী হত্যা করেছে ইসরায়েল: ব্রিটিশ সংস্থার অভিযোগ

ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে থাকা যুক্তরাজ্যের নাগরিককে ধরেছে রুশ সেনারা