TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা হারাল সরকার, এনটিএমসি বিলুপ্ত করে সিআইএস গঠন

ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করার ক্ষমতা সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাহার করে এবং বহুল আলোচিত ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্ত করে নতুন কাঠামো প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশ সংশোধনের বিস্তারিত দিক তুলে ধরে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ সেবা কখনোই বন্ধ করা যাবে না। এর মাধ্যমে অতীতের ইন্টারনেট শাটডাউনের মতো সিদ্ধান্তের আইনগত সুযোগ পুরোপুরি রুদ্ধ করা হলো। সরকার চাইলেও ভবিষ্যতে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে না।

সংশোধিত অধ্যাদেশে এনটিএমসি বিলুপ্ত করে ‘সেন্টার ফর ইনফরমেশন সাপোর্ট’ (সিআইএস) নামে একটি নতুন সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এই সংস্থা সরাসরি কোনো আড়িপাতার কাজ পরিচালনা করবে না; বরং আধা-বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদনের ভিত্তিতে আইনানুগ ইন্টারসেপশনের ক্ষেত্রে কারিগরি ও তদারকি সহায়তা দেবে।

আইনে প্রথমবারের মতো ‘আইনানুগ আড়িপাতা’র সংজ্ঞা ও পরিধি বিস্তারিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা, জরুরি প্রাণরক্ষা, বিচারিক ও তদন্তের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কেবল অনুমোদিত সংস্থাগুলো নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে আড়িপাতা চালাতে পারবে। আধা-বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই আড়িপাতা বৈধ হবে না।

এনটিএমসির পটভূমিও তুলে ধরা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। ২০০৮ সালে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের ভবনে গঠিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) পরে ২০১৩ সালে এনটিএমসি নামে পরিচিত হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে এই সংস্থাটি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হয়েছিল। সম্প্রতি ৯৪ জন বিশিষ্ট নাগরিকও এক যৌথ বিবৃতিতে এনটিএমসি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান।

নতুন আইনে বিটিআরসির ভূমিকা ও কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০১০ সালের বিতর্কিত সংশোধনের কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে কমিশনের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু লাইসেন্সে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেও অধিকাংশ লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষমতা আবারও বিটিআরসির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি ‘জবাবদিহিতা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। প্রতি চার মাসে বিটিআরসির গণশুনানি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং সেই শুনানির ফলোআপ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় সময় কমানো, অতিরিক্ত জরিমানা হ্রাস এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির কথাও আইনে উল্লেখ রয়েছে।

সিম ও ডিভাইস রেজিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করে কোনো নাগরিককে অযথা নজরদারি বা হয়রানি করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। একই সঙ্গে ‘স্পিচ অফেন্স’ সংক্রান্ত কঠোর ধারা সংশোধন করে কেবল সহিংসতার আহ্বানকে অপরাধের আওতায় রাখা হয়েছে, যা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আইনানুগ আড়িপাতার ওপর সংসদীয় নজরদারি আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রতি বছর একটি জাতীয় বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে, যেখানে আড়িপাতার কারণ ও ক্ষেত্রসমূহ তুলে ধরা হবে। বাজেট, কার্যক্রম ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও নিয়মিত পর্যালোচনা করা হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ না করার অঙ্গীকারটি অত্যন্ত ইতিবাচক। আইনের আওতায় আড়িপাতা আনার উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও বিটিআরসির ক্ষমতা আরও কমে যাওয়াকে তিনি নেতিবাচক দিক হিসেবে উল্লেখ করেন।

একই বৈঠকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ হিসেবে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশে তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হওয়ায় আইন আরও কঠোর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্রঃ প্রেস উইং

এম.কে

আরো পড়ুন

জাল নোট নিয়ে গুজবঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ, ভারতে দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারতের ‘মানবিক সিদ্ধান্ত’: সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন