প্রতারণা ও অর্থ-আত্মসাতের জন্য গ্রাহকের দায়েরকৃত মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার সেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এদিন দু’জনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ওহিদুল ইসলাম। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু শুনানি করেন।
আসামিপক্ষে ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ ও জে আর খাঁন রবিন রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রাসেল দম্পতিকে আদালতে আনা হয়। এ সময় তাদের দু’জনকে সিএমএম আদালতের হাজখানায় রাখা হয়।
যেভাবে বাড়ে ইভ্যালির দায়
সময়ের আলোচিত নাম ইভ্যালি। বর্তমান গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। দিত লোভনীয় সব অফার। নিজেদের পছন্দের পণ্যে এমন লোভনীয় অফার পেতে ঝাঁপিয়ে পড়তেন অসংখ্য গ্রাহক। এখন প্রশ্ন হলো সাইক্লোন ও টি-টেনের মতো অফারগুলো কিভাবে দিতো দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই প্রতিষ্ঠানটি।
নতুন গ্রাহকদের উপর দায় চাপিয়ে পুরাতন গ্রাহকদের আংশিক অর্থ ফেরত অথবা পণ্য ফেরত দিতেন অনলাইনে পণ্য সরবরাহকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। দায় ট্রান্সফারের দুরভিসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে গ্রাহক যত তৈরি হয় দায় তত বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ব্যবসা বাড়াতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আইটেম নিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। মোবাইল সেট, টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোটরবাইক এমনকি গাড়িও বিক্রি করেছেন। মূল্যছাড়ের অফারে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি বিশাল আকারের দায়ে তৈরি হয়।’
‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা, যেখানে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা’- বিভিন্ন সংস্থায় প্রকাশিত এই বিপুল পরিমাণ দেনার বিষয়ে র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রাসেল কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ দেনার পরিমাণ আরও বেশি; ‘প্রায় হাজার কোটি টাকা’ বলে র্যাবকে জানিয়েছেন।
এক পর্যায়ে ইভ্যালিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করছিলেন ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল উল্লেখ্য করে, র্যাব বলেন, ‘সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ই-কমার্স ব্যবসা সংক্রান্ত যে নীতিমালা করা হয়েছে তার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা কিংবা গ্রাহকদের দেনা পরিশোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না।’
গ্রেপ্তার রাসেল ‘জেনেশুনেই নেতিবাচক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছেন’ বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি। আল মঈন বলেন, ‘বিদেশি একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে লোভনীয় অফারের আলোকে ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু করে।’
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখের বেশি। তিনি বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে এত সংখ্যক গ্রাহক সৃষ্টি করেছেন। ইভ্যালির বিভিন্ন লোভনীয় অফারগুলো হলো- সাইক্লোন অফার (বাজার মূল্যের অর্ধেক মূল্যে পণ্য বিক্রয়); ক্যাশব্যাক অফার (মূল্যের ৫০-১৫০% ক্যাশব্যাক অফার); আর্দ্রকুয়েক অফার, প্রায়োরিটি স্টোর, ক্যাশ অন ডেলিভারি। এছাড়া বিভিন্ন উৎসবেও ছিল জমজমাট অফার, যেমন- বৈশাখী, ঈদ অফার ইত্যাদি।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
নিউজ ডেস্ক