ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার ভয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দূতাবাসগুলো খালি করতে শুরু করেছে ইসরাইল। এরইমধ্যে কমপক্ষে ২৮টি দূতাবাস বা কনস্যুলেট অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গেলো সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন সামরিক উপদেষ্টা নিহত হওয়ার পর, তেহরান ওই হামলার প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয়। এর পরপরই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে তেল আবিব।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেমভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুজালেম পোস্ট।
হিব্রু দৈনিক ইয়াদিওথ আহারোনোথের বরাতে পার্সটুডে জানায়, ইসরাইল যেসব দেশে তার দূতাবাসগুলো খালি করে ফেলেছে সেসব দেশের মধ্যে বাহরাইন, মিশর, জর্দান, মরক্কো ও তুরস্ক।
ইসরাইলি সাংবাদিক ও সামরিক ভাষ্যকার ইতালি ব্লুমেন্তাল এক এক্স পোস্টে লিখেছেন, ইরানি প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে বিশ্বব্যাপী আমাদের দূতাবাসগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশ কয়েকটি দেশে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলো খালি করে ফেলা হয়েছে। কিছু মিশনের কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং এই মুহূর্তে এসব মিশনকে কোনো অনুষ্ঠান পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরান পাল্টা হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর কমব্যাট ইউনিটের সব সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে বিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়াও তলব করা হয়েছে রিজার্ভ সেনাদের।
গতকাল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইসরাইলে জিপিএস পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এরইমধ্যে ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলের বাসিন্দারা গুগল ম্যাপ, ওয়াজ এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস-এ ব্যাপক বিঘ্নের কথা জানিয়েছেন। যেখানে তেল আবিবের অনেক গাড়ি চালককে দেখানো হয়েছে যে, তারা বৃহস্পতিবার বৈরুতে ছিলেন। ফলে ইসরাইলের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
একই দিনে সাবেক ইসরাইলি গোয়েন্দা প্রধান আমোস ইয়াদলিন বলেছেন, পাল্টা হামলার জন্য ইরান এই শুক্রবারকে বেছে নিতে পারে। রমজানের শেষ এবং ইরানি কুদস (জেরুজালেম) দিবস শুক্রবার।
যদিও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরাইলে কোনো ধরনের আক্রমণ চালায়নি ইরান।
এর আগে মঙ্গলবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলো, ইরানি কনসুলেটে কর্মরত সামরিক উপদেষ্টাদের কূটনৈতিক দায়মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও ইসরাইল সেই আইন অগ্রাহ্য করে অত্যন্ত কাপুরুষোচিতভাবে হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ইরান এখন এই হামলার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে এবং জাতিসংঘ সনদ অনুসারে জবাব দেয়ার অধিকার রাখে।
তেহরান বলছে, ইরান দখলদার ইসরাইলকে এই অপরাধযজ্ঞের জন্য অনুতপ্ত হতে বাধ্য করবে। এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে ইসরাইল তার অবধারিত পরাজয় এড়াতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানি কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ইরান পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে, যা ফলে আরও বিপাকে পড়বে ইসরাইল।
সূত্রঃ দ্য জেরুজালেম পোস্ট
এম.কে
০৭ এপ্রিল ২০২৪