17.3 C
London
June 14, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিকযুক্তরাজ্য (UK)

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাজ্যের সামরিক সহায়তা ছিল নাঃ যুক্তরাজ্য সরকার

ইসরায়েলের ইরানে হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্য সামরিক সহায়তা দেয়নি বা ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করতে সহায়তা করেনি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার সকল পক্ষকে দ্রুত উত্তেজনা হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেন, “ইসরায়েলের রাতের হামলায় যুক্তরাজ্য কোনোভাবে অংশগ্রহণ করেনি।” তিনি আরও জানান, রয়্যাল এয়ার ফোর্স (RAF) কোনো সামরিক পদক্ষেপে অংশ নেয়নি যাতে ইসরায়েলে আঘাত হানা ইরানি ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে যে, ইরানে এই হামলায় তারা কোনোভাবেই জড়িত ছিল না। তারা ইসরায়েলের পদক্ষেপকে একতরফা আখ্যা দিয়েছে এবং ইরান ও তার মিত্রদের মার্কিন স্বার্থ বা কর্মীদের টার্গেট না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় অংশ নিয়েছিল, যখন RAF টাইফুন জঙ্গিবিমান ইরানের ছোড়া ড্রোন গুলি করে নামিয়েছিল। একইভাবে অক্টোবর ২০২৪-এ তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময়ও কিছুটা অংশগ্রহণ ছিল। তবে ইসরায়েলের গাজায় মানবিক সহায়তা অবরোধ ও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার কারণে ব্রিটেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং ইসরায়েলি সরকারের দুজন চরমপন্থী মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

শুক্রবার স্টারমার বলেন, “এই হামলার খবর উদ্বেগজনক। আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাই যেন তারা পিছু হটে ও উত্তেজনা হ্রাস করে। উত্তেজনা কারও উপকারে আসে না। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাই হওয়া উচিত অগ্রাধিকার। এখনই সময় সংযম, শান্তি ও কূটনৈতিক পথে ফেরার।”

শিল্পমন্ত্রী সারা জোনস স্কাই নিউজকে জানান, সরকার “সংযমের আহ্বান জানাতে ও পরিস্থিতি শান্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানে হামলা চালিয়েছে কারণ তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ শুরু করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির “কঠোর শাস্তি”র হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের ছোড়া ১০০ ড্রোন আটকাতে চেষ্টা করছে।

বিশ্ব নেতারা যখন দুই পক্ষকেই সংযমের আহ্বান জানাচ্ছেন, তখন শুক্রবার সকালে ব্রিটিশ মন্ত্রীরা জরুরি বৈঠকে বসেন। সূত্র জানিয়েছে, সকালবেলা যুক্তরাজ্য সিদ্ধান্ত নেয় তারা ড্রোন ভূপাতিত করতে বা সামরিক হস্তক্ষেপে অংশ নেবে না। পরে যদিও অবস্থান কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ব্রিটেন তার আগের হস্তক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের বিমানবাহিনীর সঙ্গে মিলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় “সীমিত অবদান” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিল। ২০২৪ সালের এপ্রিলেই যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, তারা ৭০টি ইরানি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে।

সেই সময়ের পর থেকে গাজার পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে মানবিক সহায়তা নিতে আসা বহু ফিলিস্তিনির মৃত্যুর ঘটনায় ব্রিটিশ সরকার ইসরায়েলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে।

শুক্রবার স্কটিশ কনজারভেটিভ কনফারেন্সে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বাডেনক বলেন, তিনি ইসরায়েলের হামলার প্রতি সমর্থন জানান এবং বলেন, “আমরা যেন ভুলে না যাই, আমরা কার পক্ষে আছি।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক। ইরান ইতোমধ্যেই আমাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করেছে। সুতরাং স্পষ্ট করে বলি—ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা যুক্তরাজ্যের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে। আমি ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করি।”

স্টারমারের উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বানের সঙ্গে একমত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু যদি ইসরায়েল দেখে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, তাহলে তারা বসে থাকতে পারে না। ইরানই সেই পক্ষ যারা উত্তেজনা বাড়াবে এবং এতে পুরো বিশ্বের বিপর্যয় ঘটবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ইস্যুতে আমাদের দ্বিধান্বিত হওয়া উচিত নয়। কেবল শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে ইরানকে থামানো যাবে না, যারা আমাদের জীবনব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারে।”

একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়ায়, ইউরোপীয় নেতারা শুক্রবার তাৎক্ষণিক উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানান এবং প্রতিশোধ থেকে বিরত থাকতে বলেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন ইসরায়েলের হামলাকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এখন কূটনৈতিক সমাধান “আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি”।

জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জ বলেন, বার্লিন কূটনৈতিক সব উপায় ব্যবহার করবে যাতে উত্তেজনা না বাড়ে। তার মতে, “ইরান যেন কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করে”—এই লক্ষ্য অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও সংযমের আহ্বান জানান এবং বলেন, ফ্রান্স বারবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির নিন্দা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, তিনি বলেন, “ইসরায়েলের আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তার অধিকার পুনর্ব্যক্ত করছে ফ্রান্স।”

বার্লিন জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে ম্যাক্রোঁ, মার্জ ও স্টারমার টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং তারা “নিয়মিত যোগাযোগে থাকার” প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, তিনি ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সংযমের আহ্বান জানাবেন। তিনি বলেন, “আমি কূটনীতির প্রতি সমর্থন জানানোতে জোর দেব।”

কিছু নেতারা ইসরায়েলের পদক্ষেপের প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন। স্পেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইওলান্দা দিয়াজ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করেন “বিশ্বকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য”। তিনি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান এবং বলেন, “ইসরায়েলি শাসনের ওপর তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই শান্তির জন্য বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক পথ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান হামলাগুলোকে “সুস্পষ্ট উস্কানি” হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন, নেতানিয়াহু এবং তার “নরহত্যা নেটওয়ার্ক” পুরো অঞ্চল ও বিশ্বকে আগুনে পরিণত করছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৩ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

ভিসা আইন কঠোরতায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার মুখে নিয়োগকর্তারা

যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদনের হার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে

বিশ্বজুড়ে ‘হালাল হলিডে’র জনপ্রিয়তা বাড়ছে