ইসরাইলের বন্দিশিবিরে ফিলিস্তিনি কয়েদিদের ওপর চালানো অকথ্য নির্যাতন ও যৌন নিগ্রহের ভয়াবহ চিত্র এবার উঠে এসেছে খোদ ভুক্তভোগীদের জবানবন্দিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুই ফিলিস্তিনি নাগরিক তাদের ওপর চালানো পৈশাচিক নিগ্রহের বিবরণ দিয়েছেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইসরাইলি জেলগুলোতে বন্দিদের ওপর সুপরিকল্পিত নির্যাতনকে ‘রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে অভিহিত করার পর এই নতুন সাক্ষ্য বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইলের মেগিদ্দো ও সদে তিমান কারাগারগুলোতে বন্দিদের ওপর পদ্ধতিগত উপায়ে যৌন সহিংসতা চালানো হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে।
সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক সামি আল-সাইয়ি (৪৬) জানান, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাকে মেগিদ্দো কারাগারে ১৬ মাস আটকে রাখা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সামি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, ৫-৬ জন রক্ষী তাকে বিবস্ত্র করে একটি ব্যাটন বা লাঠি দিয়ে ধর্ষণ করে।
সামির ভাষায়, রক্ষীরা অট্টহাসি দিচ্ছিল এবং টিটকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করছিল—মজা পাচ্ছো তো? আমি তখন মনে মনে শুধু মৃত্যু কামনা করছিলাম। রক্ষীরা কেবল শারীরিক যন্ত্রণাই দেয়নি, বরং তার পরিবারের নারী সদস্যদেরও সেখানে নিয়ে আসার হুমকি দিয়েছিল।
আহমেদ (ছদ্মনাম) নামে ১১ সন্তানের এক জনক শোনান আরও এক লোমহর্ষক কাহিনী। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়ার দায়ে গ্রেফতার হওয়া আহমেদকে বাথরুমে নিয়ে নগ্ন করে শুইয়ে দেওয়া হয়। এরপর রক্ষীরা ‘মেসি’ নামের একটি কুকুরকে তার ওপর লেলিয়ে দিয়ে যৌন লাঞ্ছনা ও অপমানিত করে। আহমেদ বলেন, আমি যন্ত্রণায় যত চিৎকার করছিলাম, তারা তত বেশি আমাকে মারছিল। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর তিনি প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।
গত আগস্টে সদে তিমান সামরিক কারাগারের একটি সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়, যেখানে এক বন্দিকে যৌন নির্যাতন করতে দেখা যায়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ সেনার মুক্তির দাবিতে ইসরাইলে কট্টর-ডানপন্থিরা বিক্ষোভ শুরু করেছে। এমনকি ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটেও লিকুদ পার্টির নেতা হ্যানোক মিলউইডস্কি চিৎকার করে বলেছেন, হামাসের খুনিদের ওপর সবকিছুই বৈধ, সবকিছুই জায়েজ।
এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইসরাইলি নাগরিক মনে করেন, গাজার বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালালেও সেনাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করা উচিত নয়।
বর্তমানে ইসরাইলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা যুদ্ধের আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই কোনো আনুষ্ঠানিক চার্জশিট নেই। ইসরাইলি কারা কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ইসরাইলি জেলগুলোতে বন্দিরা এখন কার্যত যমপুরীতে বাস করছেন।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

