ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানির ওপর অবিলম্বে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০ জন এমপি ও লর্ড। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যরা একযোগে ব্রিটিশ সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
১৮ জুলাই ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ও বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডসের উদ্দেশে পাঠানো ওই চিঠিতে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির লাইসেন্স ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার দাবিও জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করলে ব্রিটিশ সরকার গণহত্যায় সহায়তার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী আইনপ্রণেতাদের মধ্যে রয়েছেন জেরেমি করবিন, জন ম্যাকডোনেল, জারাহ সুলতানা প্রমুখ। সমন্বয়ক লেবার এমপি স্টিভ উইদারডেন জানান, ইসরায়েল গাজায় যে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, তার ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ ব্রিটেনেই তৈরি। তার ভাষায়, “ব্রিটিশ রপ্তানি লাইসেন্স ছাড়া সেগুলো উড়ত না, বোমা ফেলত না।”
ব্রিটিশ সরকার এর আগেই ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে এবং গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তায় নিষেধাজ্ঞা শিথিলের আহ্বান জানায়। তবে এমপি ও লর্ডরা বলছেন, শুধু নিন্দা নয়, কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধই এখন একমাত্র উপায়।
চিঠিতে ২০২৪ সালে ইসরায়েলে ব্রিটিশ অস্ত্র রপ্তানির তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এক্সপোর্ট কন্ট্রোল জয়েন্ট ইউনিটের (ECJU) তথ্যমতে, সে বছর ১৪১.৬ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি সরাসরি ইসরায়েলে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ইস্যুকৃত বলে মনে করা হয়।
তবে ট্রেডমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার দাবি করেন, অনুমোদিত ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের অধিকাংশ সামগ্রী আসলে ন্যাটো মিত্র বা তৃতীয় দেশের জন্য। তিনি জানান, এর ৮৫ শতাংশ ছিল ‘একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পে ইসরায়েলি কোম্পানির সহায়তায়’ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।
এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব তথ্যের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চিঠির লেখকেরা। তারা জানতে চেয়েছেন—এই প্রকল্প কী, কোন ন্যাটো মিত্র এতে যুক্ত, কবে থেকে শুরু হয়েছে, এবং প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?
গত মাসেই হাইকোর্ট ব্রিটিশ নির্মিত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে রপ্তানি বন্ধে দায়ের করা মানবাধিকার মামলাটি খারিজ করে দেন। বিচারক রায় দেন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়া আদালতের নয়, নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার।
স্টিভ উইদারডেন অভিযোগ করেন, “অস্ত্র রপ্তানিতে স্বচ্ছতা চাইলেও সরকার কোনো উত্তর দেয়নি। এমনকি জনগণের ন্যূনতম জানার অধিকারকেও অস্বীকার করা হচ্ছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিও সম্প্রতি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে না এলে ভবিষ্যতে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞার পথ সরকার খোলা রাখছে।
ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাজ্যের এ অবস্থান ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এখন দেখার বিষয়, ব্রিটিশ সরকার আইনপ্রণেতাদের এ চাপের কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায়।
সূত্রঃ মিডল ইস্ট আই
এম.কে
২৩ জুলাই ২০২৫