20.3 C
London
June 11, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে চাপে ফরেন অফিস

গাজায় ইসরায়েলের কথিত যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্য সরকার জড়িত হয়ে পড়েছে – এমন আশঙ্কায় ফরেন অফিসের ৩০০’র বেশি কর্মকর্তা একটি অভ্যন্তরীণ চিঠিতে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এরপর ফরেন অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন।

এই অভ্যন্তরীণ চিঠিটি ফরেন অফিসের কর্মীদের মধ্যে এটি চতুর্থ এমন চিঠি, যা গাজা যুদ্ধ এবং যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যার পরিণতিতে কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক হতাহত হন।

১৬ মে তারিখে দেওয়া এই চিঠিতে বলা হয়, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে “স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করছে” এবং যুক্তরাজ্য সরকার তার অস্ত্র রপ্তানি এবং রাজনৈতিক সমর্থনের মাধ্যমে এই পরিস্থিতিকে নীরব সমর্থন জানাচ্ছে।

চিঠিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ১৫ জন মানবিক সহায়তাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা, গাজায় ত্রাণ সহায়তা স্থগিতকরণ, এবং “অনাহারকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার” করার অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়। এছাড়াও গাজা দখল এবং জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলি মন্ত্রীদের বক্তব্যও উল্লেখ করা হয়, যা স্পষ্টভাবে জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকারের এমন অবস্থান “বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার নীতিতে ধস নামাচ্ছে” এবং এতে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চিঠির জবাবে ফরেন অফিসের স্থায়ী সচিব অলিভার রবিনস এবং ডেপুটি সচিব নিক ডায়ার লিখেছেন, “সরকারের নীতির সঙ্গে যদি কারও গভীর মতবিরোধ থাকে, তবে তাদের জন্য একটি সম্মানজনক পথ হলো পদত্যাগ করা।”

তারা জানান, অভ্যন্তরীণ আপত্তি জানানোর বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও, চূড়ান্ত অসন্তুষ্টির ক্ষেত্রে সিভিল সার্ভিস ত্যাগ করাই শ্রেয়।

সরকার বলছে, ইসরায়েল “মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে” থাকলেও, তা প্রমাণ করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক আদালতের। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগবে বহু বছর।

এদিকে, ইসরায়েলে F-35 যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত ব্রিটিশ যন্ত্রাংশ সরবরাহ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকার বলছে, এই সরবরাহ বন্ধ হলে গোটা ন্যাটো-নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তবে এনজিও গ্লোবাল লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এবং আল-হক ইতোমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য প্রায় ৩০টি অস্ত্র রপ্তানি লাইসেন্স স্থগিত করলেও, আরও কিছু লাইসেন্স ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে।

সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন ইতোমধ্যে ৫০ জন এমপির সমর্থন নিয়ে গাজা যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন – কেন ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান নিয়মিত গাজার আকাশে নজরদারি করছে এবং সেই তথ্য কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

সম্প্রতি ইসরায়েল আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ব্রিটিশ পতাকাবাহী ‘মাদলিন’ নামক একটি মানবিক সহায়তা জাহাজ আটক করেছে। এতে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ সহ ১২ জন যাত্রী ছিলেন, যারা গাজার খাদ্য অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবিতে যাত্রা করছিলেন। তাদের বর্তমানে ইসরায়েলি হেফাজতে রাখা হয়েছে। ফরেন অফিস এখনো এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।

ফরেন অফিসের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, ইসরায়েলকে সমর্থনের অভিযোগ এবং সরকারের স্পষ্ট জবাবহীনতায় যুক্তরাজ্যের গাজা সংকটে ভূমিকা এখন বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১০ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ঠেকাতে লন্ডনের সঙ্গে চুক্তি চায় প্যারিস

যুক্তরাজ্যে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা ব্যবসায়ীদের, কর-বেতন বৃদ্ধির চাপ

লন্ডনের বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন বরিস জনসন

অনলাইন ডেস্ক